চতুর্মুখী চাপে ভারত

ভারত বর্তমানে একাধিক কূটনৈতিক ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বিশেষত বাংলাদেশ, চীন, পাকিস্তান, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন দিল্লির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: বর্তমান প্রেক্ষাপট

ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই জটিল এবং বহুমাত্রিক। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যেই বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব ও ভারতে বাংলাদেশবিরোধী প্রচার কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।

পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির সফরকে তাই এক নতুন শুরু হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার এই সফরে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলানোর চেষ্টা করা হবে।

সফরের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে সরকারের পালাবদলের পর এই প্রথম ভারতের কোনো শীর্ষ কূটনীতিক ঢাকায় আসছেন। সফরটি এমন এক সময় হচ্ছে যখন বাংলাদেশে গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং ভারতে তার আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নতুন করে আলোচনার দরজা খুলেছে।

সফরের মূল এজেন্ডাগুলোতে সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন, এবং দুই দেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে ভারতের উদ্বেগ এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারের সমালোচনা আলোচনায় প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীনের প্রভাব ও বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উত্তেজনার পেছনে চীনের প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। চীন বাংলাদেশের অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ক্রমাগত প্রভাব বিস্তার করছে। বাংলাদেশের সাথে চীনের বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্কের গভীরতা ভারতকে নতুন কৌশলগত চাপে ফেলেছে।

এদিকে, পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের সাম্প্রতিক উন্নয়ন ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের জন্য আরেকটি দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় চীন-পাকিস্তান-মালদ্বীপের মতো দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন

ভারতের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নীতিগত পরিবর্তন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন কৌশলগত অগ্রাধিকার ভারতের জন্য নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাওয়া ইউনূস সরকারের পদক্ষেপগুলো ভারতীয় স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে করা হচ্ছে।

এফওসি বৈঠকের গুরুত্ব

আজকের এফওসি বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। ভারতীয় প্রতিনিধিত্ব করবেন বিক্রম মিশ্র। কূটনৈতিক সূত্র মতে, এফওসিতে পানি, সীমান্ত, বাণিজ্য, এবং ভিসা ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের মতে, এফওসি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, “সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বাস্তবমুখী উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ

বিক্রম মিশ্রির সফরের সাথে মিল রেখে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাথে বৈঠক করবেন। এই বৈঠক বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে, ভারত এই উদ্যোগকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছে।

ভবিষ্যৎ সম্পর্কের দিকনির্দেশনা

বিক্রম মিশ্রির সফর দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, “এই সফর পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার দরজা খুলবে।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনে বিক্রম মিশ্রির সফর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, এটি কেবল শুরু। চতুর্মুখী চাপের মুখে ভারত একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করতে পারবে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়। দীর্ঘমেয়াদে, দুই দেশের জন্যই পারস্পরিক সহযোগিতা ও আস্থা পুনর্স্থাপন জরুরি।


বিতর্কের মুখে অবশেষে মুখ খুললেন পলকের শ্যালিকা, জানালেন মঞ্চে ওঠার কারণ

নাটোরের সিংড়ায় বিএনপির আয়োজিত শনিবারের জনসভায় মঞ্চে উপস্থিত হয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালিকা ডা. ফারজানা রহমান ওরফে দৃষ্টি। ওই ঘটনার একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দেয়।

ডা. ফারজানা রহমান সিংড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলামের ভাতিজি। এ ঘটনার জেরে অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনুকে শোকজ করেছে জেলা বিএনপি।

রোববার রাতে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে ডা. ফারজানা রহমান স্পষ্ট করেন ঘটনার পটভূমি। তিনি জানান, গত ৬ ডিসেম্বর বিকেলে চেম্বারে যাওয়ার পথে রিকশা না পেয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় সিংড়া কোর্ট মাঠে পৌঁছালে স্থানীয় কিছু মানুষ তাকে ঘিরে কুশল বিনিময় করেন এবং মঞ্চের নিচে চেয়ারে বসার অনুরোধ জানান। একপর্যায়ে মাইকে তার নাম ঘোষণা করা হলে তিনি মঞ্চে ওঠেন। তবে বিএনপির নেতারা উপস্থিত হয়ে সভা শুরু করলে তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান।

তিনি আরও বলেন, তার চাচাতো বোনের স্বামী সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক হলেও তিনি নিজে কখনো আওয়ামী লীগের কোনো সুবিধা বা পরিচয় গ্রহণ করেননি। তার বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় সিংড়া থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ঘটনাটি নিয়ে চলমান আলোচনা ও সমালোচনায় তিনি অত্যন্ত বিব্রত বলে জানিয়েছেন ডা. ফারজানা। তার বক্তব্য, একটি সাধারণ ভুল বোঝাবুঝি থেকে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।