অর্থের কারনে রক্তের সম্পর্কও অনেক সময় ছোট হয়ে যায়। বর্তমান যুগে এমন অনকে ঘটনার দৃষ্টান্ত মানুষের সামনে নিয়ে এসেছে গন মাধ্যম। বিগত দুই তিন বছর ধরে এক মা তার দেশ ও সন্তানের কাছে ফিরার আকুতি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে সেটা হক আদালত বা গন মাধ্যম। সেখানেই থেমে থাকেনি সে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ নি/র্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তার মা সামসুন নাহার তসলিম। ২০ জুন বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ল রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সামসুন নাহার তসলিম এফ অভিযোগ করেন।
বৃদ্ধ মহিলা আরও অভিযোগ করেন যে ব্যারিস্টার তুরিনকে তার অনৈতিক ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণে বাধা দেওয়ার জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। মেয়েকে হয়রানির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের মা শামসুন নাহার তসলিম। “আমি আজ দুই বছর, তিন মাস এবং ১৯ দিন আমার বাসা থেকে বাইরে আছি। আমার স্বামী মারা যাওয়ার 16 দিন পর তুরিন আমাকে উচ্ছেদ করেছে। আমার দোষ হল তার (তুরিন আফরোজ) কিছু আচরণের প্রতিবাদ করা। উদাহরণস্বরূপ, আমি সবসময় ভাড়া নিতাম। আমাদের ভাড়াটেদের কাছ থেকে টাকা। আমার স্বামী অবসর নেওয়ার পর থেকে ভাড়ায় আমাদের সংসার ও ওষুধ চলে।’
এরপর বাবার মৃত্যুর পর তুরিন জোর করে বাড়ি ভাড়া নেয়। দারোয়ান ও ভাড়াটিয়ারা রাতে অপরিচিত লোকের বাড়িতে প্রবেশের অভিযোগ করলে তুরিনের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হতো। সে তার বন্ধু বলে ডিজিএফআই, র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হুমকি দিত। তিনি আরও বলেন, “আমি প্রবণতা বুঝতে পারছি না। তিনি (তুরিন) বলতেন, “তুমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো, আমি সেখান থেকে নিয়ে যাবো।” আমি আমার গ্রামের বাড়ি নীলফামারী যেতে পারব না। জমি ও বাড়ি নিজের নামে।এর প্রতিবাদ করলে বড় বোন (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ও ছোট বোন (প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা) বিষয়টি তুলে আনতেন।
সামসুন নাহার তসলিম বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে জানাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি ভেবেছিলাম তিনি একজন মা। তার বাড়িতে থাকলে তিনি কী করতেন? আমরা জানি তিনি অন্যায় সহ্য করবেন না। আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। আজ মিডিয়ার মাধ্যমে তার সহযোগিতা কামনা করছি।আমার শরীর খুবই খারাপ।পঁচাশি শতাংশ কিডনি অকেজো।আবার ডায়াবেটিস আছে।ওষুধ কেনার জন্য বাসা ভাড়ার টাকা পেতাম,কিন্তু তিনি তা নিয়ে যান। দেশে থাকার জায়গা নেই।
আমি এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়াই। এই বয়সে দেশ ছেড়ে বিদেশে থাকব কেন? এই দেশ আমার জন্মভূমি এবং আমার ৪৭ বছরের পরিবার। আমি এখানে থাকতে চাই. আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের ভাই শাহনেওয়াজ শিশির এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আমাকে এবং আমার বিধবা মাকে ভয়ভীতি ও হয়রানি করে আসছেন। কারণ একটাই, আর তা হলো- দেশের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য। বিব্রতকর অবস্থায় বিষয়টি এতদিন লুকিয়ে রেখেছিলাম।আমি এবং আমার মা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কাউকে অপমান করতে চাইনি।বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার পরও আমি নিয়মিত রাজউকের কর ও ভূমি কর দিচ্ছি।কিন্তু আমার অনুপস্থিতিতে , তুরিন আফরোজ ক্ষমতা ও অসাংবিধানিকভাবে প্রশাসনের জোরপূর্বক আমার ও আমার মায়ের ক্ষতি করছে।ব্যারিস্টার তুরিন শুধু ঢাকা নয়, আমাদের মামাতো ভাইদের দেশ নীলফামারীকেও জিম্মি করে রেখেছেন।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ায় তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় জিডি (জিডি নং ১১৮) করেন তার ভাই শাহনেওয়াজ শিশির। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘তুরিন আফরোজ শিশিরের নিজস্ব ভবনে থাকেন। তিনি কানাডা প্রবাসী। কয়েক বছর আগে, তাদের মাকে তুরিনে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। শিশির পরে মায়ের সঙ্গে কানাডায় চলে যান। এখন কানাডায় নিজ বাড়িতে ফিরলে তার বোন তুরিন আফরোজ তাকে ঢুকতে দেয়নি।
এরপর বাড়ির দখলের অভিযোগে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ঢাকার প্রথম যুগ্ম জজ আদালতে তুরিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৬ সালের ২ মার্চ তুরিন আফরোজ পুলিশের ভয় দেখিয়ে মা শামসুন নাহারসহ অন্য ভাড়াটিয়াদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। নিজেকে বাড়ির মালিক দাবি করে বাড়ি ও জমির দলিলও দখলে নেয় তুরিন। গত ১৪ জুন তুরিন আফরোজের ভাই শাহনেওয়াজ শিশির উত্তরা পশ্চিম থানায় তাকে শেষ বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগে আরেকটি জিডি করেন।
এ ঘটনায় মামলা এখনো কোর্টে চলমান অবস্থায় রয়েছে। সুষ্ঠু কোন সমাধান এখনো পায়নি বলে দাবি সামসুন নাহারের।
https://youtu.be/wkNVGX5VSyU