দুর্ঘটনা সম্পূর্ণ একটি দৈবিক বিষয়, কখন কে কোথায় দুর্ঘতনার কবলে পড়বে সেটা কেউই বলতে পারেনা। অনেক পরিবহণ চালাকরা আছে যাদের নেই কোনো ড্রাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা, নেই কোনো লাইসেন্স। তারা ঠিক মতো গাড়ি চালাতে পারে না যার ফলে যখন তখন ঘটাচ্ছে দুর্ঘটনার মত দুঃখজনক ঘটনা। এই দুর্ঘটনায় পরিবারের মানুষ হারাচ্ছে তাদের আপনজনদের। সম্প্রতি তেমনি একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের রায়পুর এলাকায়।
রাত ৩টা বাজে। এ সময় সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন। তবে বুধবার রাতের এই সময়ে মিরসরাইয়ের উত্তর গড়াইশ গ্রামের কেউ ঘুমায়নি। অনেক দূর থেকে কান্না আর হাহাকার শোনা যাচ্ছিল।
আরও খবর: মিরসরাইয়ে সিএনজি অটোরিকশাকে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় ৪ জন প্রয়াত হয়েছেন
ওইদিন রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের রায়পুর এলাকায় দ্রুতগামী কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় ওই গ্রামের শামসুদ্দিন চালকের দুই ছেলে সিএনজি অটোরিকশা চালক শেখ ফরিদ (২৬) ও সুমন (২৬) প্রয়াত হন। গ্রামবাসী, আত্মীয়স্বজন ও সিএনজি অটোরিকশা চালকরা তাদের দেখতে রাতভর বাড়িতে ভিড় করেন। স্বজনদের হাহাকারে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে শেখ ফরিদ ও সুমনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের লাশ ঘিরে রেখেছে প্রতিবেশী ও বন্ধুরা। তাদের বাবা-মা তাদের সন্তানদের হারিয়ে পাগল। ঘরের ভেতর থেকে নারীদের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। ফরিদ ও সুমনের সন্তান বাবা শামসুদ্দিনকে জড়িয়ে ধরে। শামসুদ্দিন ড্রাইভার তার স্ত্রী, তিন ছেলে এবং তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিন কক্ষের টিনশেড বাড়িতে থাকেন।
শেখ ফরিদের তাসফিয়া (5) ও শেখ রাহীন (২) এবং সুমন নিশাত (৭) এবং মারিয়া (৪) নামে দুটি সন্তান রয়েছে।
বাবা শামসুদ্দিন তার সন্তানদের হারিয়ে নাতি-নাতনির কথা ভাবছেন। তিনি বলেন, আমি ও আমার দুই ছেলে ফরিদ ও সুমন সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। রোজ রাত ১০টার মধ্যে ছেলেরা গাড়ি গ্যারেজে রেখে বাসায় চলে আসে। আজ বেলা ১১টার পরও তারা বাড়িতে আসেননি। রাত সাড়ে ১১টায় খবর পেলাম আমার সোনার রত্ন ভ্যানের আড়ালে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। এখন তাদের সংসার কে দেখবে? কে তাদের সন্তানদের দেখাশোনা করবে?
প্রসঙ্গত, বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের রায়পুর এলাকায় দ্রুতগামী একটি কাভার্ডভ্যান চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিন সিএনজি অটোরিকশা চালক ও একজন নাইট গার্ড প্রয়াত হন। এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন আহত হন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না। দর্ঘটনা কেড়ে নেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে এর ফলে পরিবারকে নামতে হয় রাস্তায়। এরকম ঘতনা ঘটছে হর হামেসা। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রত্যহ প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ। এই যে স্বজন বিয়োগ এই শূন্যতা পূরণ কে করবে। অকালে প্রিয় মানুষটিকে হারায়ে পরিবার হয়ে যায় একবারে নিঃশ্ব।