আলোচিত-সমালোচিত ও সাময়িক বরখাস্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হারুন অর রশীদকে বাঁচাতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের একাংশ তৎপরতা শুরু করেছে। তারা ইতোমধ্যে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের জন্য তদবির শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
সূত্র জানায়, সানজিদার স্বামী আজিজুল হক, একজন প্রশাসনিক ক্যাডার কর্মকর্তা এবং বর্তমানে রাষ্ট্রপতির এপিএস হিসেবে নিযুক্ত, গত শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) শাহবাগের বারডেম হাসপাতালে ৩৩তম ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা এডিসি সানজিদা ও ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তা এডিসি হারুনকে একসঙ্গে দেখেন। এ সময় আজিজুলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতা উপস্থিত ছিলেন। সানজিদার সঙ্গে হারুনের সম্পর্কের কারণে হৈচৈ হয়। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে তিন পক্ষই চলে যায়। পরে এডিসি হারুন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানা হয়ে থানায় নিয়ে যান। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম, বৈজ্ঞানিক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিমকে থানায় ওসির কক্ষে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারধরে আহত আনোয়ার হোসেন নাঈমের কয়েকটি দাঁত পড়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নাঈমের বন্ধুরা জানান, নাঈমকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। তার ঘাড় লাঠি দিয়ে পিটিয়ে টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নাঈম এখনো ঘাড় নাড়াতে পারছে না। বাকি দুজন ঘটনার পরপরই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে যান।
এ ঘটনা জানাজানি হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক তাৎক্ষণিকভাবে এডিসি হারুনকে প্রত্যাহার করে তাকে রমনা বিভাগ থেকে পুলিশ পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) বদলি করেন। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশে এডিসি হারুনকে পিওএম থেকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়। এর একদিন পর এডিসি হারুনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সাময়িক বরখাস্তের নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ খবর এডিসি হারুনকে পুলিশের রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্তের পরপরই পুলিশ ও প্রশাসন ক্যাডারদের মধ্যে বহুদিন ধরে চলা দ্বন্দ্বের বিষয়টিও সামনে আসে। এরই মধ্যে হারুনকে বাঁচাতে পুলিশের একটি দল অভিযান শুরু করেছে। এডিসি হারুনকে এর আগেও মারধর করা হয়েছে এবং অনেকে সাফিকে শ্লোগান দিতে শুরু করেছে।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় ডিএমপির পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন ডিএমপির উপ-কমিশনার (অপারেশন্স) আবু ইউসুফ। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তবে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) ও ডিআইজি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের নির্যাতনের ঘটনা শুরু হয় বারডেম হাসপাতালে। সেখানে রাষ্ট্রপতির এপিএস মামুন এর আগে বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুনের ওপর হামলা চালান। এই বিষয়টিও তদন্ত করা উচিত।
তবে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে মারধর করলেও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এডিসি হারুন যেভাবে তিন ছাত্রলীগ নেতাকে থানায় এনে মারধর করেছে তা ফৌজদারি অপরাধ। আগে মারধর করলে তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রতিকার চাইতে পারতেন। তা না করে তিনি আইনের বাইরে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। একজন পুলিশ অফিসার পুরো বাহিনীর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
হাসপাতালে আহত ছাত্রলীগ নেতাকে দেখতে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দোষী কে বলতে পারব না। দুই কর্মকর্তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিলে কার দোষ তা জানা যাবে।
পুলিশ ও ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল রহমান সোহাগ তার বন্ধু। এ কারণে ছাত্রলীগের একটি অংশও বিষয়টিকে ‘বড়’ না করে সমাধানের চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে দেখা করে বলেন, এ ঘটনায় কোনো ফৌজদারি মামলা হবে না। হারুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির দাবি জানান তারা।