আতিকুর রহমান তার কষ্টার্জিত টাকা ইস্টার্ন ব্যাংকের রাজশাহী শাখার অ্যাকাউন্টে রেখেছিলেন। তিনি একটি বীমা কোম্পানির শাখা ব্যবস্থাপক। জালিয়াতির মাধ্যমে ইস্টার্ন ব্যাংকের রাজশাহী শাখার অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ১০টি মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস ডেভেলপমেন্ট নম্বরে এই টাকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু গ্রাহকের কিছুই নজরে পড়েনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইস্টার্ন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ফলে এ ব্যাংকে রাখা টাকার নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ ভুক্তভোগী গ্রাহকের। কারণ, ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ছাড়া বিকাশের ১০টি নম্বরে টাকা নেওয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪০০ টাকা তোলা হয়েছে। ১৬ ও ১৭ আগস্ট ১০টি বিকাশ নম্বর থেকে টাকা তোলা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে আমি জানতাম না।
বিদেশে অবস্থান করে টাকা তোলা হয়েছে উল্লেখ করে আতিকুর রহমান বলেন, “গত ১৫ আগস্ট আমি ব্যক্তিগত কাজে ভারতে যাই। ১৯ আগস্ট দেশে আসি। ৩ সেপ্টেম্বর টাকা তুলতে ব্যাংকে যাই। তারপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছে আমার একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই।রপর স্টেটমেন্ট চাইলে তা দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ।পরে আমি নিশ্চিত হলাম টাকা তোলা হয়েছে।পরের দিন ৪ সেপ্টেম্বর জিডি করি নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায়।পুলিশ জানিয়েছে, তারা প্রাথমিক তদন্ত করেছে।কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।এ অবস্থায় গত সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করি।
ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে রাজশাহী ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয়ে এ আদেশ পাঠানো হয়েছে। গ্রাহকের পক্ষে শুনানি করেন জেলা জজ আদালতের আইনজীবী শাহীন আলম মাহমুদ। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দেওয়া স্টেটমেন্টে দেখা যায়, ১০টি বিকাশ নম্বরে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ০১৭৩৩২৭৫১৬১ নম্বরে ২০ হাজার ৪০০ টাকা, ০১৭৯০১৪৫৪০২-০১৬৪০০৯৩৯২৩ ও ০১৬৪০০৯৩৯২২ নম্বরে ২৫ হাজার ৫০০ টাকা করে এবং ০১৭৮৭০২৮৩৩৩, ০১৮২৮১৬২৫১০, ০১৭৭৪৬২৭৪৪৩, ০১৭৯৭৮৫১৫৮০, ০১৭৮৭০০৩৩৮০ ও ০১৫১৭০০২৫৮৯ নম্বরে ৩০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
আতিকুর রহমান মামলার আরজিতে উল্লেখ করেন, দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ডলার এনডোর্স করতে তিনি ব্যাংকে গিয়েছিলেন। তিনি ভারতে যাচ্ছেন বলে অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা জানতেন। ফলে তার অনুপস্থিতিতে ব্যাংকের এক বা একাধিক কর্মকর্তা এই টাকা তুলে নিয়েছেন বলে সন্দেহ করেন আতিকুর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইস্টার্ন ব্যাংকের রাজশাহী শাখার ব্যবস্থাপক আবির আহমেদ খান বলেন, ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের অনুমতি ছাড়া আমি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। টাকা কিভাবে গেল জানি না।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা বলেন, ‘আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন এবং ২৫ অক্টোবর অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত ইস্টার্ন ব্যাংকের রাজশাহী শাখাকে তদন্তে সার্বিক সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশের এই অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহীর নির্বাহী পরিচালক এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংকে জমার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজশাহীর একই ব্যাংকের এক গ্রাহক বলেন, আমার অজান্তে অন্য একজন ব্যাংকে রাখা টাকা তুলে নেবে, এ কেমন নিরাপত্তা? এ নিয়ে আমি চিন্তিত। ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আবার তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে ইস্টার্ন ব্যাংককে এখন আমাদের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নইলে টাকা কেড়ে নেবে সেই আতঙ্কে থাকতে হবে সবাইকে।
প্রসঙ্গত, প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের অজান্তে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হারিয়ে গেলে অবিলম্বে গ্রাহককে টাকা ফেরত দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১৩ মার্চ, ২০১৭ এ, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধান ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ সময় গ্রাহকের অজান্তেই চেক জালিয়াতিসহ বিভিন্নভাবে টাকা উত্তোলনের ঘটনায় এ আদেশ দেওয়া হয়। গ্রাহকদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এ আদেশ দেওয়ার পরও থানায় জিডি করার ১৬ দিন পরও আতিকুর রহমানের অ্যাকাউন্ট থেকে হারিয়ে যাওয়া টাকা ফেরত দেয়নি ইস্টার্ন ব্যাংক।