বর্তমান সময়ে দেশে অনলাইনে পন্য কেঁনা-বেঁচার প্রবনতা ব্যপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই সুবাদে একটি চক্র গ্রাহকদের কাছ থেকে নানা কৌশলে লোভনীয় অফার দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমানের অর্থ। ইতিমধ্যে এইমন বেশ কয়েকটি প্রতারনাকারী প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে প্রকাশ্যে। এদেরই মধ্যে অন্যতম একটি কিউকম। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা ৪ দফা দাবি জানিয়েছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমকে আইনি কাঠামোর মাধমে ব্যবসা পরিচালনা করতে দেওয়াসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে কিউকম কাস্টমারস অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনটি মানববন্ধন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই পাঁচ বছর ধরে পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে আসা ‘ফস্টার’ নামের একটি সংস্থার কথা তুলে ধরেন কিউকম গ্রাহকরা। ফস্টারের বিরুদ্ধে কিউকমসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মোট হাজার কোটি টাকা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। কিউকম কাস্টমারস অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, ফস্টারকে নজরে রেখে গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার অনুমতি দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এছাড়া ফস্টারে স্কো-সিস্টেমে কিউকম গ্রাহকদের আটকে রাখা টাকা সাতদিনের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়াসহ ফস্টারের সিস্টেম স্বয়ংক্রিয় করার দাবি জানানো হয়েছে মানববন্ধনে। খুলনা থেকে আসা রিসালাত হোসেন জানান, ফেসবুকের মাধ্যকে কিউকমের লোভনীয় ডিসকাউন্ট দেখে পরিবারের সবাইকে রাজি করিয়ে প্রায় ৭ লাখ টাকায় ছয়টি মোটরসাইকেল অর্ডার দিয়েছিলেন তিনি। এখন আর তা না পাওয়ার অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন তারা। সরকারকে দ্রুত এর সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।কিউকমকে আইনের আওতায় রেখে ভোক্তাদের পণ্য বুঝিয়ে দেওয়ার সুযোগ প্রদানের দাবি জানান আরেক গ্রাহক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্কো-সিস্টেম চালু হয়েছিল বলেই সরকারের ওপর আস্থা রেখে একটি মোটরসাইকেল অর্ডার দিয়েছিলাম।’
মানববন্ধনে কিউকম গ্রাহকদের পাশাপাশি আরও ছিলেন কিউকম কাস্টমারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জেসি আলম হৃদয়, সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন আহমেদ। অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কিউকমের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন এক ভুক্তভোগী। এরপর গত ৩ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পু/লি/শ (ডিবি)। অভিযোগ রয়েছে, টিভি, ফ্রিজ ও মোটরসাইকেলে বিশেষ অফার দিয়ে পণ্য বিক্রি করতো কিউকম। একাধিক অর্ডারের মধ্যে কিছু অংশ ডেলিভারি দিয়ে বাকিগুলোর জন্য গ্রাহকদের মাসের পর মাস অপেক্ষায় রাখতো প্রতিষ্ঠানটি।
২০২০ সালের নভেম্বর থেকে এ ধরনের প্র/তা/র/ণা করে আসছে কিউকম। বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর কিউকম-এর কর্মকর্তারা তাদের তেজগাঁও কার্যালয় বন্ধ করে গা-ঢাকা দেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে ২৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর সঙ্গে জড়িত রেডিও জকি (আরজে) নীরবকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে কিউকমের প্রধান নির্বাহীর দাবি, গ্রাহক ও মার্চেন্টের কাছে তাদের ২৫০ কোটি টাকার মতো দেনা রয়েছে। তার অভিযোগ, ফস্টারের কাছে প্রায় ৪২০ কোটি টাকা আটকে আছে তাদের। গ্রাহকের হাতে পণ্য সরবরাহের মাস পেরিয়ে গেলেও ফস্টার তাদের অর্থ দিচ্ছে না। বিপুল পরিমাণ অর্থ আ/ট/কে থাকার কারণেই গ্রাহকের পণ্য সময়মতো সরবরাহ করতে বিঘ্ন হয়েছে তাদের।
দেশে অনলাইনভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সরকারী কোন নীতি মালা না থাকায় দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলো নানা ভাবে গ্রাহকদের ঠকাচ্ছে। এমনকি ইতিমধ্যে বেশ কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছে থেকে বিপুল পরিমানের অর্থ হাতিয়ে দেশ ছেএর পালিয়েছে। তবে এই সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে রয়েছে সরকার। এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বেশ কিছু নীতিমালা প্রনয়ন করেছে।