একজন সরকারী কর্মকর্তা বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদের খোজ পেয়ে অভিযান চালায় দুদক। এরপর একেরপর চমকপ্রদ তথ্য সামনে আসতে থাকে দুদকের কাছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। একপর্যয়ে দুদকের উপ-পরিচালকের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে আসলে কে এই বসির? ঘটনা সূত্রে জানা যায়, ছোট-বড় প্রায় সব ধরনের চুক্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিরঙ্কুশ আধিপত্য রয়েছে বশিরের । তিনি শহরে স্বঘোষিত ডন নামেও পরিচিত। আর এই সাম্রাজ্য গড়তে তার সময় লেগেছে প্রায় বিশ বছর।
তিনি এবং তার কোম্পানি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রা. সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বশির আহমেদের বিরুদ্ধে ৪৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, দুদকে দাখিল করা সম্পদের বিবরণীতে তিনি ১ কোটি ৭৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন। এছাড়া অর্জিত ও দখলে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেন। তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসৎ উপায়ে অর্জিত ৪১ কোটি ৮৭ লাখ ৯১ হাজার ৬৫৫ টাকার সম্পদ।
দুদকের উপ-পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
বশিরের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডে বশির আহমেদ জিকে শামীমকে পরাজিত করেছেন। তাকে বলা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জি কে শামীম।
পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রকল্প পরিচালক থেকে পিয়ন সবাই তার কথায় অটল। এভাবেই সরকারি প্রতিষ্ঠান দখল করে রেখেছে তারা। বশিরের বিরুদ্ধে পূর্বাচল আবাসিক এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ কীভাবে এবং কারা করবে তা নির্ধারণ করে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড। কাজ পেতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৬ থেকে ১২ শতাংশ কমিশন নেওয়া হয়। এর একটি অংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে দিয়ে গত দুই দশক ধরে বশিরের লোকজন শহরে আধিপত্য বিস্তার করেছে।
৩০ জানুয়ারী, ২০২০ তারিখে, দুদক বশির আহমেদ এবং তার নির্ভরশীলদের নামে অর্জিত সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ, দায়, আয়ের উৎস এবং অন্যান্য বিবরণ নির্ধারিত ফর্মে জমা দেওয়ার জন্য একটি নোটিশ জারি করে। ওই বছর, তারা ১৯৯০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়ের জন্য সম্পদ অর্জনের তথ্য ৭ জুন জমা দেয়।
সম্পদ বিবরণীতে বশির আহমেদের অধিগ্রহণের ৫৬ কোটি ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৩ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। এই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে, বশির আহমেদ 2008-09 থেকে ২০২০-২১ সাল পর্যন্ত সম্মানী আয়, ব্যবসা বা পেশা থেকে আয়, অন্যান্য উত্স থেকে আয়, গৃহ সম্পত্তি থেকে আয় এবং বিবিধ ঘোষিত আয় সহ ১৪,৩৮,৮৬,৩৪৮ কোটি টাকা দেখিয়েছেন। ভাড়াটিয়াদের আয় ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
অসাধু উপায়ে অর্জিত ৪১ কোটি ৮৭ লাখ ৯১ হাজার ৬৫৫ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের উৎস দেখাতে না পেরে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বশির আহমেদ ২০১৯-২০ অর্থবছরে মধুমতি ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংক থেকে ৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮৫ টাকা ঋণ দুদকের কাছে ঘোষণা করেন। কিন্তু দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই ঋণের কার্যাদেশের বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থ বশির আহমেদের সম্পদ বিবরণীতে ঘোষণা করা হয়নি।
অনেক মানুষ আছে যারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষ ও সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে। কিছুদিন আগেও হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ কারী পিকে হালদার কে আটক করে ভারত সরকার। তবে বশিরের এই মামলায় এখনো তাকে আটক করেনি পুলিশ। এত টাকা কোথা থেকে এসেছে খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন।