দেশ-বিদেশ মিলিয়ে প্রায় হাজার কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছেন পিকে হালদার। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরে দেশ ছেড়ে বিদেশে অবস্থান করছিলেন তিনি। নাম পরিচয় গোপন করে দীর্ঘদিন আত্মগোপন করে থেকেও অবশেষে পার পায়নি সে। ধরা পড়ে যায় ভারত পুলিশের হাতে। তাকে আটক করার পরে এক এক করে তার সহযোগীদের আটক করেছে পুলিশ। ভারতে যেমন তার সহযোগী রয়েছে তেমনি রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি তার আরো দুই নারী সহযোগীকে আটক করেছে র্যাব।
৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী ছিলেন খবির উদ্দিন। এই খবির পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালকের দায়িত্বে থাকাকালীন প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে খবিরের দুই মেয়ে কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে ৬৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ। তারা দুই দশক ধরে কানাডায় বসবাস করছেন।
গত ২৮ জুলাই পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তারা দেশে আসেন। বুধবার তারা দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এর আগে বুধবার ধানমন্ডি এলাকা থেকে দুজনকে আটক করা হয়।
অভিযানে থাকা র্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত দুই মাস ধরে আমরা তাদের অনুসরণ করছিলাম। এর আগে গত ২৮ জুলাই শারমিন ও তানিয়া কানাডা থেকে দেশে আসেন। বুধবার সকালে তারা দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়, যা দিয়ে বেশ কিছু মালপত্র ধানমন্ডির বাসা থেকে বিমানবন্দরে ফেলে রাখা হয়।
অ্যাম্বুলেন্স আবার ধানমন্ডিতে এলো। দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা জানতে পেরে বাড়ির আশপাশে অবস্থান করেন র্যাব সদস্যরা। রাত দেড়টার দিকে বাড়িটি ঘেরাও করা হয়। কোনোভাবে র্যাবের উপস্থিতি টের পান খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে। গ্রেফতার এড়াতে তারা ভবনের ছাদের একটি কক্ষে আত্মগোপন করে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, অভিযানে প্রতিটি কক্ষে তল্লাশি চালানো হলে শারমিন ও তানিয়াকে পাওয়া যায়নি। ওই ফ্ল্যাটে থাকা তার আত্মীয়রা জানান, দুই বোন এখানে নেই। সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হন। তাদের কথায় সন্দেহ হলে প্রযুক্তির সহায়তা নেয় র্যাব। মোবাইল ট্রাকিং করে দেখা যাচ্ছে তারা ধানমন্ডির এই ভবনের আশেপাশে আছে। পরে র্যাব সদস্যরা ভবনের ছাদে যান। একটা টেবিলের নিচে শুয়ে আছে দুই বোন (শারমিন ও তানিয়া)। পরে তাদের আটক করে র্যাবের গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
র্যাব জানায়, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক খবির উদ্দিন পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি নিজেই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে ও বেনামে ঋণ নিয়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে এই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।
চলতি বছরের ৭ মার্চ কোম্পানির খেলাপিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু তারা হাজির না হওয়ায় গত ১৯ এপ্রিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন আদালত।
বুধবার বিকেলে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “র্যাব জানতে পেরেছে যে সংস্থার দুই খেলাপি বর্তমানে দেশে অবস্থান করছে। ঋণ খেলাপিদের ধরতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াচ্ছে। ফলে বুধবার সকালে তাদের আটক করা হয়।
মঈন জানান, গ্রেফতারকৃত দুজন তাদের বাবা খবির উদ্দিনের মাধ্যমে ঋণ নিয়েছিল। শারমিন ৩১ কোটি ও তানিয়া ৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। তারা গত ২৮ জুলাই কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসেন এবং গোপনে আজ কানাডায় দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিকে 24 নভেম্বর 1997 সালে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। এদিকে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পিকে হালদারসহ কোম্পানির বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ না করে অর্থের অপব্যবহার:
প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তি আমানতকারী রয়েছে এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা আটকে আছে। এই অর্থের পুরোটাই জনগণের ঋণ হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাওনা। এ অর্থের একটি বড় অংশ কোম্পানির পরিচালকরা বিভিন্ন নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন।
পিকে হালদারে অনেক সহযোগী এখন পুলিশের আওতায়। তবে আইনশৃক্ষলা বাহিনি ধারনা করছে যে, পিকে হালদারের আরো সহযোগী রয়েছে। তাদেরকে সনাক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।