সকাল থেকে বেশ ব্যস্ত ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আর সেই সময়েই জানা গেলো অবাক করা একটি খবর। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এস-টু-এজিআর নামের একটি বিমানে বোমা সদৃশ বস্তু অবতরণ করার হঠাৎ খবর আসে। এ গোপন তথ্য পাওয়ার পরপরই ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
এভিয়েশন সিকিউরিটি, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), এয়ার ফোর্স এবং আর্মি ডগ স্কোয়াড সহ নিরাপত্তা সংস্থার কাছে তথ্য প্রচার করা হয়েছিল।
এরপর বিভিন্ন সংগঠনের ৪ শতাধিক সদস্যের অংশগ্রহণে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের সদস্যরা প্রায় ৫০ মিনিটের প্রচেষ্টায় বিমান থেকে বোমা সদৃশ বস্তুটি উদ্ধার করে। পরে তারা এটি নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এ সময় বিমানটিকে অন্য সদস্যরা ঘিরে ফেলে। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয় করার অভিযান শুরু হয়। 11:42 PM এ শেষ হয়।
বোমাটি সত্য ছিল না। মিশনও ছিল না। এটি মূলত বিমানবন্দর নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের জড়িত একটি বার্ষিক নিরাপত্তা ড্রিল ছিল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতি দুই বছর পরপর বিমানবন্দরে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। আজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক্সপোর্ট কার্গো ভিলেজ টারমার্কের সামনে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএবিএ) এই মহড়ার আয়োজন করে।
মহড়ায় নেতৃত্ব দেন বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম। ট্রেনিং গ্রাউন্ডে তিনি অন-সিন কমান্ডারের ভূমিকায় ছিলেন। উইং কমান্ডার শাহেদ আহমেদ খান, ডিরেক্টর অব এভিয়েশন সিকিউরিটি ডেপুটি অন সিন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) অ্যানেক্স-১৭ অনুযায়ী, বিমানবন্দরের বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা প্রমাণ করতে প্রতি দুই বছর পরপর এই ধরনের মহড়ার আয়োজন করা হয়। হাইজ্যাকিং, অগ্নি নিরাপত্তা, এবং বোমা হামলা।
তিনি বলেন, মূলত, জরুরি পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংস্থা কত দ্রুত সময়ে আসতে পারে তা প্রমাণ করার লক্ষ্যেই এই মহড়া। অভিযানের ঘোষণার পর বিভিন্ন সংগঠন বিমানবন্দরে অবস্থান নেয় এবং নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে। কিছু জিনিস ইতিমধ্যে বিমানবন্দরের ভিতরে আছে। যেমন ফায়ার ইঞ্জিন, অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার। রানওয়ের অপর পাশে রয়েছে এয়ার ফোর্স ফোর্স এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। এছাড়া সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ইউনিট আমাদের সহযোগিতা করবে।
কামরুল ইসলাম আরও বলেন, আজকের মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল ‘সময়’ পালন করা। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় সঠিক কিনা তা পরীক্ষা করুন। আমরা দেখেছি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে কি না। কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য আমরা মহড়ার আয়োজন করেছি। আমরা পর্যায়ক্রমে বিমানবন্দরের ক্ষমতা পর্যালোচনা করি। এ ধরনের কার্যক্রম একভাবে শাহজালাল বিমানবন্দরের জন্য প্রযোজ্য এবং সিলেটের জন্য অন্যভাবে প্রযোজ্য।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মুফিদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময়ে এভসেক সদস্যগণ আইকাও’র দিক নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মহড়া বাস্তবায়ন করেছেন। প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কিছু সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার প্রশিক্ষণ ও মহড়া। সিভিল অ্যাভিয়েশনের নির্দেশনা হচ্ছে, প্রতিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে মহড়ার মাধ্যমে সক্ষমতা নিশ্চিত করা।
তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা মাত্র ৫০ মিনিটে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পেরেছি, এটা খুবই ইতিবাচক বিষয়। সবাই মিলে দ্রুত কাজ করলে পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবেলা করা সম্ভব বলে প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৫ সালে বিমানবন্দরে এমন একটি ঘটনা ঘটে। জাপান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। 2019 সালে চট্টগ্রামে এমন একটি ঘটনা ঘটে।
এয়ার ভাইস মার্শাল এম মুফিদুর রহমান আরও বলেন, আইসিএওর কিছু নির্দেশনা রয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় আমরা কি আইসিএওর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব? অনুশীলনের শুরুতে সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের এই সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। যার কর্তব্য নির্ধারণ করতে হবে। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করতে হবে। জনশক্তিকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক চলল। বিমানে বোমা থাকলে দ্রুত যাত্রীদের সরিয়ে নিতে হবে। তারপর বাকিটা করুন।
এ নিয়ে তিনি আরো বলেন, আজকের মহড়ায় হেলিকপ্টার আসার কথা ছিল। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। বিমানবন্দরে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছিল। ভবিষ্যতেও এ ধরনের পেশাদারিত্বের সঙ্গে মহড়া চালানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়াও এই কাজে সংশ্লিষ্ট সবার বেশ প্রশংসাও করেন তিনি।