রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের উপর বিভিন্ন দিক থেকে হুমকি; তাকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার এবং অবিলম্বে দেশ ত্যাগের হুংকার।
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার মান্যবর রাষ্ট্রদুত পিটার হাস তার নিজের এবং আমেরিকান এম্বাসির সকল কর্মচারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে অবশ্য আমেরিকান রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তা শঙ্কা সবসময়ই বিদ্যমান ছিল। অতীতের আরও দুই একটি ঘটনার কথা আমরা নিশ্চয় ইতিমধ্যে ভুলে যায়নি, যার কোন বিচার অদ্যাবধি হয়নি।
অপরদিকে আবার যুক্ত হয়েছে জনৈক সাবেক বিচারকের সরাসরি হুমকি। তিনি প্রকাশ্য লাইভ অনুষ্ঠানে মান্যবর রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। যদিও তার নিজের বিচারিক অতীত ছিল অতি কলঙ্কময়। তাছাড়া, ২০১৬ সালে অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের বিচারক( বিচারপতি নন, শুধুমাত্র প্রধান বিচারপতি ছাড়া কেউ বিচারপতি পদবী ব্যবহার করতে পারেন না) এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ‘জাজশিপ’ প্রত্যাহার চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা ও তার বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করার অভিযোগ করেছিলেন সুপ্রিমে কোর্টের এক আইনজীবী।
দুনীর্তি দমন কমিশনে এই অভিযোগ দয়ের করা হয়েছিল। কমিশনে অভিযোগ দেয়ার বিষয়ে উক্ত আইনজীবী জানান, সংবাদ মাধ্যম এবং বিশ্বস্ত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী দ্বৈত নাগরিক। দ্বৈত নাগরিক হিসেবে তিনি ব্রিটিশ সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। পক্ষান্তরে তিনি প্রথমে হাইকোর্টের এবং পরে সুপ্রিম কোর্টের বিবচারক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত লজ্জার বিষয় বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সময় কাগজপত্রে দ্বৈত নাগরিকের সকল তথ্য তিনি গোপন রেখেছিলেন।
তদুপরি, বিবিসির এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিচারক মানিক বলেছিলেন ‘জিয়া ঠাণ্ডা মাথার খুনি’। এ কথা বলাতে জিয়ার সমর্থক বিএনপি খুব ক্ষেপেছিল তখন। কিন্তু বিএনপি’র ক্ষেত্রে যা ঘটে সাধারণত – ওই খ্যাপা পর্যন্তই তা সীমাবদ্ধ ছিল। সাংবাদিকের আরেকটি প্রশ্ন ছিল; আপনি একজন নেতার আদর্শের অনুসারী, আর সেই আদর্শের প্রতিপক্ষ যারা তারা কি আদালতে আপনার কাছে ন্যায় বিচার পেয়েছেন, তার উওর ছিল “আমি বঙ্গবন্ধুর নীতির অনুসারী”। কি অদ্ভুত উত্তর দেখুন! অপরদিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক নাজমুল আলমও লন্ডনে বসে মান্যবর রাষ্ট্রদূতকে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাবার হূমকি দিয়েছেন।
অবশ্য তার সম্পদ ও আয়ের উৎসের তথ্য সংগ্রহেরও কথা ছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের। ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ লন্ডনে নাজমুলের মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিষয়ে ‘বাংলা ট্রিবিউন’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। দুদক তখন জানিয়েছিল, নাজমুল আলমের প্রতিবেদন আমরা দেখেছি। খুব সাধারণ পরিবারের সন্তান নাজমুল লন্ডনে ছয়টি কোম্পানি চালায় যা আবাসন, গাড়ি দুর্ঘটনার দাবি, খুচরা বিক্রি, চাকরি প্রদানকারী সংস্থা ইত্যাদিতে নিযুক্ত রয়েছে। ছয়টির মধ্যে তিনি তিনটি কোম্পানিতে যুগ্ম পরিচালক এবং একটিতে একমাত্র পরিচালক। প্রাক্তন ছাত্র নেতা এখন বিনিয়োগ ভিসায় যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। এই ধরনের ভিসার জন্য একজন ব্যক্তিকে যুক্তরাজ্যে ন্যূনতম ২০০,০০০ পাউন্ড বিনিয়োগ করতে হয়, যা ২০ মিলিয়ন টাকা।
জানা গেছে, নাজমুল বর্তমানে লন্ডনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। কিন্তু দুদকের তদন্তের কি হলো তা বোধগম্য কারনে এখনো কারো কাছে পরিষ্কার নয়। এসব তো গেল মান্যবর রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবিদারদের আমলনামা। এবার আসা যাক একটি দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার বা অবাঞ্চিত ঘোষণা করার অধিকার সরকারের আদৌ যেআছে কিনা। হাঁ, আছে। তাকে সরাসরি পিএনজি( persona non grata) ঘোষণা করলেই সেটা করা সম্ভব। কিন্তু এর ফলাফল যে কি দাঁড়াতে পারে তা অপরিণামদর্শী নেতৃত্ব হলেও সরকারের বোধগম্য না হওয়ার কোন কারণ নেই।
তবু তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম একান্ত গুণীজনদের দাবীতে মান্যবর রাষ্ট্রদূতকে বুকে সাহস নিয়ে পিএনজি ঘোষণা করা হলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওয়াশিংটনে অবস্থানরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে হয়তো পিএনজি করা থেকে দয়াপরবশ হয়ে বিরতি থাকলো। কিন্তু সবার আগে বুঝতে হবে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বা অন্য যে কেউ তার কোন ব্যক্তিগত এজেন্ডা নিয়ে কাজ করতে পারেন না। কোন রাষ্ট্রদূতেরই ভিন্ন কোন দেশে কার্য উপলক্ষে থাকাকালীন তার ব্যক্তিগত এজেন্ডা, মতামত বা কোন কার্যকলাপ পরিচালনার কোন সুযোগ নেই। তাকে শুধুমাত্র তার নিজ দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মত কাজ করতে হয়।
সুতরাং এটা সহজবোধ্য পিটার হাস বাংলাদেশ যা করছেন সেটা তার ব্যক্তিগত কাজের অংশ নয়, বরং আমেরিকা সরকারের নীতি বাস্তবায়ন মাত্র। ধরে নিলাম পিটার হাসকে পিএনজি ঘোষণা করাই হলো। আর যাইহোক বিচারক মানিক আর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের মত ব্যক্তিত্বের দাবি তো একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না! এমতাবস্থায়, আমেরিকান ফরেন সার্ভিসের সবচেয়ে কট্টর তিনজন রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে বিশেষ করে সে সমস্ত দেশের ও সরকারের চরিত্র বিবেচনায় নিয়োজিত আছেন।
এরমধ্যে কম্বোডিয়ার সরকার পতনের কারিগর W. Petrick Marphy, ভেনিজুয়েলার অত্যন্ত কট্টরপন্থী মার্কিন রাষ্ট্রদূত James Broward Story এবং লাইব্রেরিয়ার আতঙ্ক হিসাবে পরিচিত Michael A McCarthy কে অত্যন্ত সজ্জন, সদা হাস্য, ভদ্র, মিষ্টভাষী পিটার হাসের স্থলাভিষিক্ত করার কথা বাইডেন প্রশাসন বিবেচনা করতেও পারে। তখন হয়তো বোঝা যাবে আলোচ্য দুজন বীরপুরুষদের বীরত্ব এবং সরকারের প্রকৃত ক্যারিশমা।
তবে এতদূর পর্যন্ত বোধহয় যেতে হবেনা – সময় প্রকৃতপক্ষেই সমাগত!
Home / opinion / গোপন তথ্য বেরিয়ে এসেছে বিচারপতি মানিকের, দ্বৈত নাগরিকত্ব লুকিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন:কাইয়ুম
Check Also
আগামীকাল ঢাকায় বড় কিছু ঘটানোর পরিকল্পনা, আপাতত যানবাহন তল্লাসি করুন: ইলিয়াস হোসেন
আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার উদ্দেশ্যে কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন, যারা সংখ্যালঘু হিন্দুদের মধ্যে রয়েছে, পরিকল্পিতভাবে …