জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাশেফমুবিপ্রবি) গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে মৎস্য বিভাগের একই বর্ষের ছয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এই র্যাগিংয়ের শিকার মেয়েটি অসুস্থতার কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি বলে দাবি করছে।
জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের পাশের মাঠে র্যাগিংয়ের শিকার হন ছাত্রী শায়লা সাদিকা শ্রুতি। পরদিন সোমবার (২৮ আগস্ট) তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মৌসুমী আক্তারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী ছাত্রী শ্রুতি বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানাতে না চাইলেও রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে র্যাগিংয়ের ঘটনা তদন্ত না হওয়ার অভিযোগ করে ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- ফাতেমা বিনতে হোসেন নিশি, মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদ, তাহরীন তাসমিয়া সিদ্দিকী হৃদি, মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম, ফারহানুল হক মার্গ, মৎস্য বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের হাবিবুর রহমান অন্তর।
এ ঘটনার শিকার শ্রুতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে মাঝে মাঝে রুমে বসে কাঁদতাম। নিশি আপুও আমার ঘরে থাকে।সে বিষয়টি অনেক ভাবে জানতে চাইলে পরবর্তীতে আপুকে আমার ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করি। এরপর থেকে নিশি আপু আমার গোপন কথাকে পুঁজি করে আমাকে মানসিক নির্যাতন ও ভয়ভীতি দিত।
গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন মাঠে ছাত্রী হলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মৎস্য বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নিশি, হৃদি, খায়রুল, অন্তর, মুরাদ ও অন্তর ভাই আমাকে মানসিকভাবে নির্যাতন ও অপমান করে। ২৮ তারিখে আমার পরীক্ষার পরের দিন জেনেও তারা আমার সাথে এমন আচরণ করেছে। এই ঘটনায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। আমি নিছক অপমান সয্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরদিন সকালে আমাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে আমার শরীরের বাম পাশ অবশ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে আমার অবস্থা খারাপ হওয়ায় ডাক্তার আমাকে ১২টি ইনজেকশন দিয়েছেন এবং অন্যান্য চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তির কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি। পরে আমি বুলিং অ্যান্ড র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির কাছে অভিযোগ করি। আমি অভিযোগ করার পর থেকে কিছু ছাত্র আমাকে হুমকি দিয়ে আসছে এবং বারবার চাপ দিচ্ছে সমঝোতার জন্য। কেউ কেউ আমার পরিবারকে ফোন করে আমার নাম নিয়ে নানা বাজে মন্তব্য করছেন। এখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার দাবি করছি।
তবে এতসব অভিযোগ সত্ত্বেও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা র্যাগিংয়ের ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নুরুন্নাহার বেগম প্রভোস্ট ও সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফরহাদ আলী ঢাকা বলেন, ‘গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী শ্রুতির কক্ষে একটু সমস্যার কথা শুনেছি। কথাটা শোনার পর তার রুমমেট এবং হলের দায়িত্বে থাকা আমরা তিনজন একসঙ্গে বসে ঘটনাটা মিটমাট করি।এ ব্যাপারে শ্রুতি আমাদের কাছে কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেনি। মাননীয় উপাচার্যের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সমঝোতা করেছি।
ঘটনার অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুলিং অ্যান্ড র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও মৎস্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৌসুমী আক্তার ঢাকা বলেন, আমি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা মামলা করি। তদন্ত শুরু হয়েছে।এ নিয়ে আমরা তিন-চারটি মিটিং করেছি।যারা এর সাথে অভিযুক্ত তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি।আমরা এই ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।আমরা এই সপ্তাহের মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।