বাংলাদেশ সেনাবাহিনির সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মাদ রাশেদকে শেষ করার ঘটনায় প্রতক্ষভাবে জড়িত ছিলেন ওসি প্রদিপ। এই হত্যা মামলায় গ্রেফতার হন তিনি এরপর দুদকের মামলায় বেরিয়ে আসে অর্থ উপার্জনের নানা তথ্য।ইতিমধ্যে দুদকের করা মামলার রায় দেওয়া হয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আদালত তাকে ২০ বছর এবং তার স্ত্রী চুমকি করণকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেয়। বুধবার দেওয়া রায়ে প্রদীপের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গৃহবধূ হয়েও শত কোটি টাকার মালিক হলেন প্রদীপের স্ত্রী চুমকি! দুদকের কাছে নিজেকে কমিশন ও মাছ ব্যবসায়ী দাবি করলেও তিনি কোনো কাগজপত্র দিতে পারেননি। প্রদীপের স্ত্রী চুমকির চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় একটি ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে একটি বাড়ি, ৪৫টি সোনার বার, একটি গাড়ি ও একটি মাইক্রোবাস, কক্সবাজারে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
প্রদীপের শ্বশুর অজিত কুমার করণ একজন ছোট হার্ডওয়্যার ডিলার। কিন্তু তিনি তার মেয়ে চুমকিকে বাড়ি, গাড়ি ও টাকা দিয়ে ‘বিরল’ ভালোবাসা দেখিয়েছেন। তবে অন্য দুই ছেলে উজ্জ্বল করণ ও শিমুল করণ আদালতে কোনো সম্পদ দান করার রেকর্ড পেশ করতে পারেননি। অজিত তার মেয়ে চুমকিকে চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় ‘শান্তিকুঞ্জ’ নামে সাড়ে ছয় তলা বাড়ি উপহার দেন। পরে মেয়েকে একটি প্রাইভেট কারও উপহার দেন। যদিও এর আগে প্রদীপ তার শ্বশুরবাড়িকে ৯ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। চুমকি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অন্যান্য আত্মীয়দের কাছ থেকে ১২০ টি স্বর্ণালঙ্কার উপহার পেয়েছিলেন। চুমকিও তার ভাইয়ের কাছ থেকে প্রায় ৫৪ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছেন। এভাবে একে অপরের বাবা, ভাই ও স্বামীকে দান করে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হলেন চুমকি! তবে এই অনুদানের বিপরীতে প্রদীপ ও চুমকি অর্থের বৈধ উৎস দেখাতে না পারায় ফাঁদে পড়েন।
চুমকি চট্টগ্রামের বয়াখালীতে মাছ চাষের জন্য ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় পাঁচটি পুকুর লিজ নিয়েছেন বলে দাবি করেন। তিনি আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন যে তারা ১০ বছরে ১.৫ কোটি টাকা আয় করেছে। তবে বোয়ালখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার দুদককে বলেন, এর পেছনে কোনো সঠিক প্রমাণ নেই।
গৃহবধূ চুমকি জানান, তিনি কমিশন ব্যবসায়ী হলেও প্রমাণ দিতে পারেননি। ২০১৩-১৪ সালে তিনি ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে কমিশন ব্যবসা শুরু করেন এবং ওই বছরে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয়ের দাবি করলেও কমিশন ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংক লেনদেন—কোনো কিছুই আদালতে দাখিল করতে পারেননি। তিনি সরকারী কর্মকর্তার স্ত্রী হিসাবে ব্যবসার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের পারমিট, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, বিল, ভাউচার, অফিস, গুদামের রেকর্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হন।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, পুলিশ বাহিনীতে থাকাকালীন প্রদীপ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন এবং সেই অর্থ দিয়ে তার স্ত্রীর নামে জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পাহাড় গড়ে তোলেন। এই প্রদীপের একটা বড় অংশ তার স্ত্রী চুমকি ও শ্বশুর অজিতকে দান করে বৈধ করার চেষ্টা করেছে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের আলোচিত মেজর সিনহা হত্যাকান্ড নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে একরকম ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল এবং মানুষ এই ঘটনার পেছেন যে বা যারা রয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছিল ঐ ঘটনার মুল হোতা ছিলেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদিপ কুমার দাশ।