বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে তৈরী হয়েছে নতুন এক ইতিবাচক অধ্যায়। আর এ অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কিছু নেতা।জানা গেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপি নেতা সাবেক বিএনপি নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়ার উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান আওয়ামী লীগ নেতা।
গতকাল শনিবার সকালে তারা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এই তিন প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেনি।
প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা তিনজন হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মঈন উদ্দিন ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের মাঠ ছেড়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এই তিন নেতা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে (সরাইল-আশুগঞ্জ) দলের তিন নেতাকে বসানো হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে আজ (শনিবার) মধ্যে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে আইনজীবী আবদুস সাত্তারকে বিজয়ী করতে দলে অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা পেয়ে গতকাল (শুক্রবার) এই তিনজনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারবে না- এই বার্তা তাদের দেওয়া হয়। রোববার শেষ দিন পর্যন্ত এ তিন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারে রাজি হননি জেলার নেতারা। শনিবারের মধ্যে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ-নির্বাচনে ১৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েন ৫ জন। এখন পর্যন্ত বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন।
সারাদেশে বিএনপির ছয় সাংসদ সদস্যের পদত্যাগের পর শূন্য আসনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আইনজীবী আবদুস সাত্তার ২০১৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগ আসনটি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দেয়। এরপর জাতীয় পার্টি তাদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলামকে মনোনয়ন দেন। এর আগের দুই নির্বাচনে এ আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন রেজাউলের শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা। জিয়াউল হক মৃধা ২০১৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন না দিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হন দলটির এ নেতা। মঈন উদ্দিন ৮ হাজার ভোটে হেরেছেন আবদুস সাত্তারের কাছে। তৃতীয় হয়েছেন জিয়াউল হক মৃধা। মঈন উদ্দিনের মতো জিয়াউল হক মৃধাও এই উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
তবে দলীয় চাপের মুখে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা প্রকাশ্যে বলছেন না ওই তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে মোঃ মঈন উদ্দিন বলেন, “আমাদের নির্বাচনী এলাকা সরাইল ও আশুগঞ্জ দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত। উপনির্বাচনের পর স্বল্প সময়ে কাঙ্খিত উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরবর্তী নির্বাচন।
মাহবুবুল বারী চৌধুরী বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই আমি অল্প সময়ের জন্য ভাঙা নির্বাচন করতে চাই না। আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে শাহজাহান আলম বলেন, ‘প্রত্যাহারের সময় দল সিদ্ধান্ত দেবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু দলীয় প্রার্থী রাখার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল (শুক্রবার) দলের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জেলা শহরের হালদারপাড়ায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। এ সময় জেলা সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য রাম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন, জেলা সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার এক ঘণ্টা বৈঠক করেন এবং তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে প্রত্যাহারের দাবি জানান। প্রার্থীতা এটা দলের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে।
তবে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী স্বতন্ত্র তিন প্রার্থীকে নিয়ে বৈঠক করার কথা অস্বীকার করেন।
তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা তিন প্রার্থীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, জেলা আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা পাওয়ার পর তিন প্রার্থীই নিজেদের মতো করে ঢাকার বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সবুজ সংকেত না পেয়ে শনিবারের মধ্যে সব পর্যায় থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশনা পান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের বার্তা খুবই কঠোর।
প্রার্থী হওয়ার আগেই বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন আইনজীবী আবদুস সাত্তার। পরে তাকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
প্রসঙ্গত,এ দিকে এই বিষয়টি নিয়ে এখন বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। সকলেই বিষয়টি নিয়ে করছেন ব্যাপক আলচনা। রাজনীতির মাঠে এমন ঘটনা এখন বেশ বিরল বলেও বলছেন অনেকেই।