সম্প্রতি ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে মানবাধিকার সংঘঠনগুলো বিবৃতি দিচ্ছে। শুধু তাই নয় এগুলোর বন্ধের দাবিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।কিন্তু বিষয়গুলি সরকারের পক্ষ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং নানা প্রকার যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সা/মাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ/কটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন পিনাকী ভট্টাচার্য হু/বহু পাঠকদের জন্য নি/চে দেওয়া হলো।
ফরাসি প্রেসিডেন্টকে দেয়া আমাদের চিঠির বাংলা অনুবাদ:
১০ সেপ্টেম্বর ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁর বাংলাদেশ সফর: মানবাধিকার এবং আইনের শাসন যেখানে প্রশ্ন বিদ্ধ
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর নি/পীড়নের শিকার নাগরিকদের পাশে দাঁড়াতে ফরাসি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান।
আমরা বাংলাদেশ প্রশ্নে ফ্রান্সকে নীরবতা ভেঙ্গে জোরালো ভূমিকা রাখার দাবি জানাচ্ছি। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী ইউরোপীয় সংস্থা হিসেবে আমাদের দাবি, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ক্রমাগত চাপে থাকা নাগরিক সমাজের প্রতি ফরাসি কর্তৃপক্ষের সমর্থন ও সহায়তা বৃদ্ধি করা উচিৎ।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এমন এক সময়ে বাংলাদেশ সফর করছেন যার ঠিক কয়েক মাস পর অর্থাৎ আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্টিত হওয়ার কথা রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমতাবলম্বীদের লক্ষ্য করে সরকারের গ্রেপ্তার ও নিপীড়ন আবারও ক্রমবর্ধমান ।
বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসহ বেশ কয়েকটি খাতে ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করলেও সামষ্টিক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার এবং আইনের শাসন নিয়ে গুরুতর অভিযোগের সম্মুখীন। সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, ব্লগার এবং সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধমূলক আইনি পদক্ষেপের ফলে সকল নাগরিক ভিন্নমতকে প্রকাশ করতে ভীত। যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গন মাধ্যম।
২০১৮ সালে প্রবর্তিত ও সম্প্রতি পরিমার্জনের করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ এর মতো কালো আইনের মাধ্যমে সরকার ব্যাপক হারে ভিন্ন মতকে স্তব্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। যা নাগরিক পরিসরকে আরও সংকুচিত করেছে।
চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দুইজন সাংবাদিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রা/ণ হারিয়েছেন। বর্তমানে কারাবন্দী আছেন ছয়জন সংবাদকর্মীI। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মৃ/ত্যুদন্ডের রায় পাওয়া দুই হাজারেও বেশি মানুষ বর্তমানে কারান্তরীন আছে। চলতি বছরের শুরু থেকে ২১৫ জনেরও বেশি মৃ/ত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া কারা ও পুলিশ হেফাজতে নি/র্যাতন এবং কারাগারগুলোতে অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার কারণে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বন্দী মৃত্য বরণ করেন।
এনজিও ও মানবাধিকার কার্যক্রমে নানা বাঁধা
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর অধীনস্থ বিভাগ এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর ক্রমাগত চাপ ও হস্তক্ষেপের কারণে এনজিও কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলো। বাংলাদেশের সক্রিয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিয়মিত এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর প্রশাসনিক ও বিচারিক হ/য়রানির শিকার হয়ে থাকেন। যা সংস্থাগুলোকে সাংগঠনিক ও মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম ব্যাহত করে।
বাংলাদেশে বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গু/ম এবং বিচারবহির্ভূত হ/ত্যাকাণ্ড নিয়ে কাজ করা আলোচিত মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর নিবন্ধন ২০২২ সালের জুন মাসে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি সংস্থাটির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়মিত আইনি ও প্রশাসনিক হ/য়রানির মুখোমুখি করা হয়েছে।
গু/ম নিয়ে জাতীয় ও আন্তজার্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর টানা প্রতিবেদন ও অভিযোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার শুরু থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। অধিকার এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত গু/মের শিকার হয়েছেন অন্তত ২২২ জন ব্যক্তি। মৌলিক অধিকার নিয়ে জাতিসংঘের পর্যালোচনার সময়ও অভিযোগগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশের নারীর বিরুদ্ধে স/হিংসতাও ব্যাপকভাবে অব্যাহত রয়েছে। বিচার ব্যবস্থা কার্যকরভাবে এসব ঘটনার ন্যায়বিচারে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় বর্তমানে লক্ষ লক্ষ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ ও অর্থনৈতিক হয়রানির উদ্দেশে প্রায়শই বিরোধী মত দমনে মামলাকে ব্যবহার করা হয়।
ধর্মীয়, জাতিগত এবং যৌন সং/খ্যালঘুরা বাংলাদেশের সমাজের গড়ে উঠা উ/গ্রপন্থার হু/মকিতে ক্রমাগত আক্রমণের ভয়ে বসবাস করে। পুলিশ ও সরকারের নিরাপত্তা পরিষেবা ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত সং/খ্যালঘু পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। এই অঞ্চলে সরকারি ও বেসরকারি অনেক অর্থনৈতিক প্রকল্প স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক জীবন ও অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
প্রতিবেশী মায়ানমার থেকে আসা প্রায় ১১ লাখেরও বেশি রো/হিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ঘটনার দিকে নজর দিতে দিয়ে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসনকে এড়িয়ে যাওয়া যৌক্তিক হবে না।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে আমরা ফ্রান্সের প্রতি বাংলাদেশ প্রশ্নে নিম্নোক্ত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের আহ্বান জানাচ্ছি:
● চলতি বছরের নভেম্বরের শুরুতে জেনেভায় আসন্ন ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর) এ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটির সামনে ফ্রান্স সুপারিশ পেশ করবে। ফ্রান্সকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ব্যক্তি নিরাপত্তা, আইনের শাসন, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হ/ত্যাকাণ্ড নিয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।
● বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ফ্রান্স এবং বাংলাদেশের মধ্যে যে কোনো ভবিষ্যৎ বাণিজ্য চুক্তিতে মানবাধিকার ও সামষ্টিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াকে শর্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
● ফরাসি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্টান ফ্রেঞ্চ ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এএফডি) বাংলাদেশে ন্যায়বিচার, আইনের শাসন এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সহ মৌলিক অধিকারকে সমর্থন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যা ২০১৮ সালে ডিসেম্বরে গৃহীত ফ্রান্সের “মানবাধিকার ও উন্নয়ন’ কৌশলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটির বাস্তবায়ন অনেকাংশে অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
● যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করেছে। ফরাসি কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা, অনতিবিলম্বে এই বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই।