গায়েবি একটি মিটিং দেখিয়ে ৭ দিনের সরকারি সফরে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। আগামী ১১ই ফেব্রুয়ারি বা তার কাছাকাছি সময়ে তিনি দেশটি সফর করবেন। ফিরবেন ১৮ই ফেব্রুয়ারি বা তার কাছাকাছি সময়ে। সরকারি আদেশে (জিও) বলা হয়েছে ‘প্রিপারেটরি মিটিং অব থার্ড জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ মিটিং অন ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট (টিফা) ইন অস্ট্রেলিয়া’ শীর্ষক মিটিংয়ে অংশ নিতে যাচ্ছেন বাণিজ্য সচিব। সঙ্গে যাবেন তার কন্যা দ্যুতি শ্রাবণী ঘোষ। প্রকাশিত সরকারি আদেশ মতে, সচিবের সফরের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে। আর পিতা হিসেবে সচিব কন্যার সফরের সমুদয় ব্যয়নির্বাহ করবেন। কিন্তু একাধিক কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে এটা নিশ্চিত করেছে যে, সচিবের ১২-১৭ই ফেব্রুয়ারি সফরকালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিদ্যমান ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট (টিফা) অধীনে তৃৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রস্তুতিমূলক কোনো বৈঠক নেই। এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে ক্যানবেয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আল্লামা সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মানবজমিন। তিনিও উল্লিখিত শিরোনামে কোনো বৈঠক না থাকার কথা স্বীকার করেন।তবে হাইকমিশনার দাবি করেছেন যে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডের (ডিএফএটি) অফিসিয়াল পর্যায়ে বাণিজ্য সচিবের “উল্লেখযোগ্য ব্যস্ততা” রয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে এবং মোবাইল ফোনে পর্যায়ক্রমে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিবের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সচিবের মেয়ে মেধাবী, পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন- এটা তার সহকর্মীরা আগেই জেনেছেন। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আরও জানান, সচিব তার মেয়েকে সমর্থন দিতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন এবং সে উপলক্ষে দেশের সরকারি পর্যায়ে বৈঠক করবেন। সফরের সাথে সম্পর্কিত একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে বৈঠকে জিআইও ইস্যুটি উল্লেখ করা হয়েছে এমন কোনও সম্ভাবনা নেই। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টিফা চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির অধীনে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের প্রস্তুতিমূলক বৈঠক কেন সচিব পর্যায়ে হবে? তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া সরকার ও বাংলাদেশ হাইকমিশন জানে যে এই মুহূর্তে প্রস্তুতিমূলক বৈঠকের প্রয়োজন নেই। তাই জিআইওতে উল্লেখিত বৈঠক না পেয়ে বিকল্প সভা করার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেন ঢাকার ওই কর্মকর্তা। তার বক্তব্য অনুযায়ী, বাণিজ্য সচিব সফরের বেশিরভাগ সময় সিডনিতেই কাটাবেন। সেখানে দরপত্রদাতাদের আদলে একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের (স্থানীয় বাণিজ্য সংস্থা) সঙ্গে সচিবের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া সচিব বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। একটি সরকারি সূত্রে জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৈঠকের উল্লেখ করে সচিবের সফরের বিষয়ে জারি করা সরকারি আদেশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আগ্রহ নিয়ে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, কঠোরতা অর্জনে সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা বা নির্দেশনা দিয়েছেন। 2রা জুলাই 2023-এ জারি করা সার্কুলারে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহায়তা সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয়ভাবে অর্থায়িত স্কলারশিপ বা ফেলোশিপ, বিদেশী সরকার, প্রতিষ্ঠান বা উন্নয়নের আমন্ত্রণে সম্পূর্ণ বিদেশী অর্থায়নে বিদেশ ভ্রমণ এবং পরামর্শদাতা সংস্থাগুলির অধীনে বিদেশী অর্থায়িত মাস্টার্স বা পিএইচডি কোর্সের অধ্যয়ন। অংশীদার এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জনগণকে নিশ্চিত করেছেন যে বিদেশ ভ্রমণ এখনও বন্ধ রয়েছে বা কর্মকর্তাদের ভ্রমণ, সেমিনার, কর্মশালার উদ্দেশ্যে সার্কুলার কার্যকর রয়েছে। পুনরায় আদেশ না হওয়া পর্যন্ত।