সম্প্রতি গত কয়েকদিন আগেই রাজধানী ঢাকার বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ী সড়কে এক বিচারপতির ছেলের গাড়ি চাপায় পায়ে গুরুতর আঘাত পান বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মনোরঞ্জন হাজং। আঘাতটি এতটাই গুরুতর হয় যে পরবর্তীতে পা’টাই হারাতে হয় তাকে। জানা গেছে, এই মুহুর্তে হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্নায় রীতিমতো ছটফট করছেন তিনি।
তবে এদিকে এবার জানা গেল, গাড়িচাপায় আহত সেই মনোরঞ্জন হাজং-এর বিরুদ্ধেই উল্টো জিডি করলেন বিচারপতির ছেলে।
মনোরঞ্জনের ওপরই দুর্ঘটনার দায় চাপিয়ে জিডিতে বিচারপতির ছেলে সাঈদ হাসান বলেন, ‘তার গাড়িটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়নি বরং বেআইনিভাবে উল্টো দিক থেকে মনোরঞ্জনই তার গাড়িতে লাগিয়ে দেন। এতে তিনি ও তার স্ত্রীর প্রাণহানির মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। তাই উল্টোপথে মোটরসাইকেল চালানোর জন্য এই দুর্ঘটনার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব মনোরঞ্জন ওপরই বর্তায়।’
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেন বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূরে আজম মিয়া।
জিডির কপিতে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর গাজীর নাম দেখা গেছে।
মনোরঞ্জন হাজং ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মহুয়া হাজং-এর বাবা।গাড়িচাপায় বাবা আহত হওয়ার ঘটনায় প্রথমে মহুয়ার মামলা না নিলে তীব্র সমালোচনার মধ্যে দুই সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) মামলাটি নেয়া হয়।তবে মহুয়ার মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি।
এদিকে জিডিতে সেদিনের ঘটনার বর্ণনায় বিচারপতির ছেলে উল্লেখ করেন, ‘গত ২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সেই রাতে, মহাখালী ফ্লাইওভার থেকে নেমে চেয়ারম্যানবাড়ির ইউলুপ ঘুরছিলেন তিনি। এ সময় উল্টো দিক থেকে এসে মনোরঞ্জনের মোটরসাইকেলটি তার গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এতে গাড়িটি সেখানেই প্রাচীরে লেগে যায় এবং প্রাণহানির ঘটনার সম্মুখীন হয়। এতে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তার স্ত্রীর ডান হাতে তিনটি আঙ্গুল ফ্র্যাকচার (ভেঙে) হয়।’
বিচারপতিপুত্র সাঈদ হাসানের দাবি, এ দুর্ঘটনার পর মনোরঞ্জনকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তিনি। দুই দফায় আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন। পরে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে সেখানে অপারেশনের ব্যবস্থা, কেবিন বরাদ্দ এবং মেডিকেল বোর্ড গঠন করাসহ যাবতীয় বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন সাঈদ।
দুর্ঘটনায় তার কোনো দোষ না থাকায়, ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেয়নি এবং তার গাড়িও আটক করেনি বলে জিডিতে উল্লেক করেন সাঈদ।
জিডিতে তিনি অহেতুক হয়রানি, অপপ্রচার, মিথ্যা মামলা, মানসিক নির্যাতন, অর্থের জন্য চাপ দেওয়াসহ নানা আশঙ্কা থেকে প্রকৃত বিষয় উদ্ঘাটনের জন্য তদন্তে অনুরোধ জানান।
এদিকে নিজে গাড়ি চাপা দিয়ে উল্টো বাবার বিরুদ্ধেই থানায় জিডির পেছনে ঐ বিচারপতির ছেলের অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে থাকতে পারে বলে সংবাদ মাধ্যমে এমনটাই দাবি করেছেন ভুক্তভোগীর মেয়ে সার্জেন্ট মহুয়া। এমনই তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারেরও অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।