প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৫৯৫ টাকা। তিনদিন ধরে গরুর মাংসের দাম কমানোর এই সিদ্ধান্তে বাজারে ঝড় ওঠে। খলিলুর রহমান তার সিদ্ধান্তে এমন সাড়া পাবেন তা ভাবেননি। যাকে মানুষ জানে ‘খলিল কসাই’ নামে। তিনি অকপটে বলেন, দাম কমিয়ে মাংস বিক্রি করলে বিক্রি বাড়বে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, কিন্তু এত হিট হবে ভাবিনি।
খলিলুর রহমানের প্রতি কেজি ৫৯৫ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্তে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা দাম কমাতে বাধ্য হন। তবে বেশির ভাগই বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। গরুর মাংসের দাম কমে যাওয়ায় বাজারে মুরগি ও মাছের দামও কমেছে। ফলে অনেকের নাগালের বাইরে থাকা এসব মাংস আবার উঠে আসছে।
খলিলের দোকান রাজধানীর শাহজাহানপুরে। নাম ‘খলিল গোস্ত বিতান’। কদিন আগে তার সাথে কথা হয় একটি দোকানে যেখানে সবসময় ক্রেতাদের ভিড় থাকে। সব জিনিসের দাম বাড়ার এই সময়ে এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম ৮০০ টাকা হওয়ার পর তার বিক্রি একেবারে কমে গেছে। লোকসান না হলেও বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মচারীরা।
তারপর তিনি ৬০০ টাকার কম দামে এক সপ্তাহের জন্য মাংস বিক্রি করে একই পরিমাণ লাভ করতে পারেন কিনা তা দেখার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী তিন দিনের জন্য ২০টি গরু কিনেছেন। তবে প্রথম দিনে দাম বাড়িয়ে ৫৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে ১৯টি গরুর মাংস। তার ‘কম দাম, বেশি বিক্রি’ পদ্ধতি কাজ করে। তিনি বলেন, দাম কমানোর পর দিনে ৪৫-৫০টি গরুর মাংসও বিক্রি হয়। আবার কেউ কেউ দাম কমিয়ে প্রতিদিন ২০-২২ টাকায় বিক্রি করছেন।
দাম ৬৫০ টাকা হলেও অনেক ব্যবসায়ী লোকসান গুনছেন বলে দাবি করছেন। তিনি আরও কম বিক্রি করছেন। তবে তিনিও লোকসান করছেন কিনা এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে খলিলুর রহমান জানান, ২০০১ সাল থেকে গাবতলী হাট থেকে গরু কিনছেন। গত কোরবানির ঈদে অনেক পশু অবিক্রিত থেকে যায়। এ ছাড়া মাংসের দাম বাড়ে এবং গরু বিক্রিও কমে। হাটে গরুর দামও কমেছে।
মাংস ব্যবসায় আসার গল্পও শোনালেন খলিল। তিনি বলেন, ‘ভাইয়ের দোকানে কাজ করে সপ্তাহে ১০০ টাকা রোজগার করতাম। আমি খরচ করিনি, আমি সঞ্চয় করেছি। এভাবে ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে গরুর মাংসের দোকান খুললাম। তখন আমার বয়স ১৬ বছর।’ এখন তার দোকানে ২৫ জন কর্মচারী রয়েছে। কেউ কেউ সেখানে ২২ বছর ধরে আছে। শ্রমিকরা জানান, বেতন কখনো বকেয়া হয়নি। করোনা ভাইরাসের সময়েও কাউকে ছাঁটাই করা হয়নি।
আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৯৫ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খলিল। লোকসান না হলে আগামী ঈদ পর্যন্ত এ দাম থাকবে।
মাংস ব্যবসার পাশাপাশি ফার্নিচারের ব্যবসায়ও নামেন খলিল। মাংসের দোকান সংলগ্ন পুরো সাততলা ভবন দখল করে আছে তার আসবাবপত্রের দোকান। তিনি বলেন, ওই এলাকায় ফার্নিচারের দোকান থাকায় বিভিন্ন সমস্যার অভিযোগ করে তার মাংসের দোকান হস্তান্তরের দাবি জানান। এ কারণে পুরো ভবন ভাড়া নিয়ে ফার্নিচার ব্যবসায় নেমেছেন তিনি। এই ব্যবসায় খুব একটা লাভ নেই। মাংসের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই এই ব্যবসা।
খলিলের জন্ম রাজধানীর বেরায়দে। তিনি জানান, বাবার কাছ থেকে পাওয়া কিছু জমি ও ব্যবসা বিক্রির আয় দিয়ে তিনি কিছু স্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এ বছর কর দিয়েছেন চার লাখ। তার দুই ছেলে আছে। বড় ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ছোট ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। অন্য কোনো ব্যবসায় যোগ দেবেন কি না জানতে চাইলে খলিল বলেন, ‘আমি একজন বোকা মানুষ। দুই পর্যন্ত পড়া। আমি শিক্ষিত লোকের মতো তেমন কিছু বুঝি না। তাই নতুন ব্যবসা শুরু করা ভীতিকর। আমার যতটুকু আছে, ভালো থাকতে চাই।