ড. তুহিন মালিক, বাংলাদেশের আলোচিত বেশ কয়েকজন ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম একজন। আইন বিশেষজ্ঞ এই ব্যক্তি দেশের নানা ধরনের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নানা ধরনের কথা বলে থাকেন সব সময়ই। আর এই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে দিয়েছেন একটি ফেসবুক লেখনি।পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনি তুলে ধরা হলো হুবহু:-
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইনের ২২ ও ৩৪ ধারামতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির একক এখতিয়ার বিইআরসির। ৩৪ (৬) ধারামতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অবশ্যই বিইআরসির কাছে পেশ করতে হবে। ৩৪ (৪) ধারামতে স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষদের শুনানি দেওয়ার পর বিইআরসি মূল্য নির্ধারণ করবে।
অথচ গভীর রাতে সম্পুর্ন বেআইনী পন্থায় জ্বালানি তেলের আকাশচুম্বি দাম বাড়িয়ে সরকার আবারও প্রমান করল- তাদের কাছে জ্বালানি খাতে আইনের শাসনের কোন মূল্য নেই।
সরকার বলছে, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারনে দাম বাড়ানো হয়েছে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তিনদিন আগে রয়টার্সের রিপোর্টে বলা হয়, ‘বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। গত জুলাই মাসে বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন ও জাপানে শিল্পোৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে তেলের চাহিদা কমেছে।’ বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকসের হিসাবে গত ১লা আগষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের ডাব্লিউটিআই অপরিশোধিত (ক্রুড) তেলের দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল হয় ৯৩.৩০ ডলার। এর পাশাপাশি লন্ডনের ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৪ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল হয় ১০০.১৫ ডলার। অথচ আমাদের সরকার সম্পুর্ণ মিথ্যা তথ্য ও ধোঁকাবাজি দিয়ে নিজেদের দূর্নীতি আড়াল করতে গরীব জনগণের পকেট কাটার সিদ্ধান্ত নিলো।
এদিকে এই ক’দিন আগেই সরকার গর্ব করে দাবী করেছে, ‘দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল মজুদ রয়েছে। বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের কোনো ঘাটতি বা সংকট নেই। সংকটের কোনো আশঙ্কাও নেই।’ অন্যদিকে গত ২৭শে জুলাই খোদ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘অকটেন আর পেট্রোল আমাদের কিনতে হয় না। … আমাদের যতটুকু চাহিদা, তার চেয়ে অনেক বেশি পেট্রল এবং অকটেন কিন্তু আমাদের আছে।’
আসলে মিথ্যা উন্নয়নের ধোঁকাবাজি করে সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে দাড়িঁয়ে আইএমএফের কাছ থেকে বেইল আউট পেতে এভাবে রাতের আঁধারে অবৈধ পন্থায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। যথারীতি বিদেশে টাকা রপ্তানি, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের মালিকদের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ, আর নিজেদের ভাগ-বাটোয়ারা সচল রাখতে জ্বালানি খাতে আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে বেআইনীভাবে জ্বালানি তেলের আকাশচুম্বি দাম বাড়িয়ে সরকার জনগনের বারোটা বাজিয়ে দিলো।
প্রসঙ্গত, তেলের দাম বাড়তি হবার কারনে এখন দেশ জুড়ে চলছে নানা ধরনের সংকট। আর এই সংকটময় অবস্থা থেকে বের হওয়াটাই এখন সরকারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে বলেই সকলে মনে করছে।