Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / গত নির্বাচনে ব্যর্থতা প্রকাশ করলেন সাবেক সিইসি নুরুল হুদা

গত নির্বাচনে ব্যর্থতা প্রকাশ করলেন সাবেক সিইসি নুরুল হুদা

আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে দলগুলোর সাথে সংলাপে বসার ব্যবস্থা করছে নির্বাচন কমিশন। কয়েকদিন আগে সাবেক এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনারদের সাথে একটি বিশ্লেষণমূলক বৈঠক করেছে কমিশন। সেই বৈঠকে কি ধরনের কথা হয়েছে সে বিষয়ে জানিয়েছেন সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদা। তিনি দেশের একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকার দেন, যেটা হুবুহু তুলে ধরা হলো।

গনমাধ্যম : আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছেন এবং দলগুলো সেই সংলাপে অংশ নিয়েছে। বর্তমান কমিশনও দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কতটা সফলতা আশা করা যায়?

কে এম নুরুল হুদা: রাজনৈতিক দলগুলো ইসির আহ্বানে সাড়া দিলে সবার জন্য ইতিবাচক হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন দলগুলোর মনোভাব বুঝবে এবং দলগুলোও কমিশনের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাবে। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে হয়তো রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে তাদের কৌশল নির্ধারণ করবে। তবে তারা যে কৌশলই নির্ধারণ করুক না কেন, আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। বাইরে থেকে নানা বক্তব্য না দিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা করাই ভালো হবে।

গনমাধ্যম : গত ১২ জুন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে আপনি পরবর্তী দলীয় সরকারের আমলের নির্বাচন কমিশনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। দুই নির্বাচন কমিশনের পার্থক্যকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

কে এম নুরুল হুদা : সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এটিএম শামসুল হুদা সাহেবকে কমিশন দায়িত্ব দিলে দেশে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং নির্বাচন স্থগিত করা হয়। প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের কথা বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এমন প্রেক্ষাপটে তারা কাজ করেছেন। তারা সে সময় নির্বাচনী আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেয় এবং তা দ্রুত রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। সংস্কারগুলো ভালো ছিল। আইনে এ ধরনের সংস্কারের জন্য তাদের অনুকূল সময় ছিল। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ তখন কোনো রাজনৈতিক সরকার ছিল না। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল। এখন যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে ছয় মাস লাগে। আইন সংস্কারের জন্য তাদের দীর্ঘ দুই বছর সময় ছিল। নির্বাচিত দলীয় সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়। ওই সময়ে এ ধরনের কাজ করা সম্ভব নয়।

গনমাধ্যম : সংসদ নির্বাচনের জন্য বিদ্যমান আইন কি যথেষ্ট? আপনার কোন উদ্যোগ সফল হয়নি?

কে এম নুরুল হুদা: আইন বলেন, অন্য কিছু বলেন, সবকিছু পরিবর্তনযোগ্য। এসবের ক্যারেক্টার ডাইনামিক। সামাজিক, রাজনৈতিক প্রয়োজন অনুসারে এগুলো সব দেশেই পরিবর্তন হয়। আমরাও কিছু বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি। বর্তমান কমিশন তাদের প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার সাথে কিছু পরিবর্তনের কথা ভাবতে পারে। আমাদের একটি উদ্যোগ ছিল প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা। বর্তমানে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন না। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ দাবি জানিয়ে আসছেন। আমি পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়া সহজ করতে চেয়েছিলাম। নির্বাচনের সময় যত্রতত্র পোস্টার লাগিয়ে তা পুরোপুরি নষ্ট করে দেওয়া হয়। আমি এটা নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলাম। আমি প্রার্থীদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পোস্টার বা বিলবোর্ড লাগানোর ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম। এতে তাদের খরচও বাঁচবে এবং এলাকার সৌন্দর্য রক্ষা হবে। আমি মনে করি কিছু আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু সময়ের সংকটে এগুলো করা সম্ভব হয়নি। প্রবাসীদের ভোট দিতে বিদেশে গিয়ে এনআইডি দেওয়া শুরু করলেও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া রোগের কারণে তা পিছিয়ে দিতে হয়।

গনমাধ্যম : আমি জেনেছি, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের ঘোর বিরোধী আপনি। কেন?

কে এম নুরুল হুদা: আমি আগেও বলেছি ইভিএমে ভোট হলে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে না। জোরপূর্বক ব্যালট পেপারে সিল মে”রে ব্যালট বাক্স ছি’/ন”তাই করে এসব অনিয়ম রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজন। দেখতেও ভালো লাগে না। নির্বাচনে বন্দুক নিয়ে লোক থাকবে কেন? এটা ভাল দেখায় না। বাংলাদেশের নির্বাচনে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মো”তায়েন করা হয়েছে তা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে বিরল। এ যেন ব’/ন্দুক নিয়ে যু”দ্ধ। এগুলো আসলে দরকার নেই। সে’/নাবা”হিনীর প্রয়োজন একেবারেই নেই।

গনমাধ্যম : নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব নেওয়ার পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল আপনার প্রথম বড় নির্বাচন। বর্তমান কমিশনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে এবং এ সিটিতে নির্বাচন দুই দফায় প্রশংসিত হয়েছে। আপনি এটা কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?

কে এম নুরুল হুদা : ভোটার ও প্রার্থীদের সহনশীল আচরণই পারে ভালো নির্বাচন উপহার দিতে। নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মানা, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের সময়েও তাই হয়েছে, আবারও হয়েছে। আসলে নির্বাচন কেমন হবে তা নির্ভর করছে প্রার্থী ও তাদের সমর্থক, ভোটার, সাধারণ নাগরিক এবং নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের আচরণবিধি মেনে চলার ওপর। স’হিং/’সতা কমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ঘরে ঘরে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আর ইভিএমও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক। আমাদের শেষ সময়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়েছে কারণ ইভিএম ও প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন।

গনমাধ্যম : আপনার সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শতভাগ ভোট পড়েছে। এতে আপনি অনেকবার আপনার অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

কে এম নুরুল হুদা: এর উত্তর আমি বারবার দিয়েছি। নতুন কিছু করার নেই। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আইনে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একটি নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে গেজেট নোটিফিকেশন হলে রিটার্নিং অফিসার ফলাফল দেন এবং নির্বাচন কমিশনের আর কিছু করার থাকে না। বিষয়টি তখন আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে এবং সংক্ষু”ব্ধ ব্যক্তিকে আদালতে যেতে হয়।

গনমাধ্যম: আপনার সময়ে নির্বাচন কমিশনের সীমাবদ্ধতা কী ছিল?

কে এম নুরুল হুদা: নির্বাচন কমিশন সব সময়ই আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ। আইনের বাইরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। বাইরের কোনো চাপ ছিল কিনা জিজ্ঞেস করলে আমি বলবো আমাদের ওপর তেমন কোনো চাপ ছিল না।

গনমাধ্যম : আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?

কে এম নুরুল হুদা: আমি মনে করি আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের মানুষের মধ্যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহনশীলতা বাড়বে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনেরও এ ব্যাপারে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। আমাদেরও আন্তরিকতার কমতি ছিল না। নির্বাচন কমিশনে যারা আসবেন তাদের প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আশা করি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কোনো স/হিং”সতা ও প্রাণহা”নি হবে না।

গনমাধ্যম: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

কে এম নুরুল হুদা: আপনাকেও ধন্যবাদ।

উল্লেখ্য, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার। এবং সেই সাথে বিশিষ্টজনেরাও আশাবাদ জানান। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে যেটা অন্য সরকার গঠিত হলে হয়তো হতো না এমনটিও তারা বলেন। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে যেটা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে, এমন কথাও তিনি বলেন।

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *