সংসদের মত যায়গায় অনেক নেতারা হতাহতির মত ঘটনা ঘটিয়েছে এমন ঘটনা নতুন নয়। এপর্যন্ত কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, এমনকি দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে একাধিক সংসদ সদস্য সাধারণ মানুষকে মারধর করে বারবার আলোচনায় এসেছেন এসকল নেতারা। রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর কলেজের অধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনায় গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের এলইডি হলে দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যানকে মারধর করে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এভাবে গত এক বছরে অর্ধডজন সংসদ সদস্য বিভিন্ন সময় মানুষকে মারধর করে নিজেদের নাম ‘আলোচনা’ করেছেন। গত ৭ জুলাই রাজশাহী-১ আসনের (গোদাগাড়ী-তানোর) সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে প্রকাশ্যে লাঠি ও হকি স্টিক দিয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে শিক্ষক সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল সংসদ সদস্য ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
১৪ জুলাই অধ্যক্ষ দাবি করেন যে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক তাকে সংসদ সদস্যের সাথে মারধর করেননি, তারা প্রধান ফোরামের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে মারামারি হয়। সংসদ সদস্যরা তাদের নিরুৎসাহিত করেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তাকে ঘিরে বারবার ষ/ ড়যন্ত্র চলছে বলে তিনি দাবি করেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাকে হেয় করার জন্য এ কাজ করেছে। বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন সরকারি কর্মকর্তা, দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে মারধর করে একাধিকবার গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন। মানুষ মারতে পারদর্শী এই সংসদ সদস্য গত ২১ মে বরগুনার পাথরঘাটার কাছে স্লুইসঘাট এলাকায় সালিশ বৈঠক ডেকে এক মাছ ব্যবসায়ীকে চড় মারেন।
সিগারেট না পেয়ে ফোরকান মিয়া নামের ওই মাছ ব্যবসায়ী এক দোকানদারকে মারধর করে। এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়ে সালিশ ডাকেন এমপি রিমন। এরপর তিনি নিজেই অভিযুক্ত ফোরকানকে শাস্তি হিসেবে চড় মারেন। অভিযোগ, ফোরকান বরগুনার সংরক্ষিত (মহিলা) সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরার সমর্থক। নাদিরার সমর্থক হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাকে নিথর করেছেন এমপি রিমন। এমপি নাদিরার বাড়িও পাথরঘাটায়।
এমপি রিমন মারধরের কথা স্বীকার করে এ সময় গণমাধ্যমকে বলেন, ফোরকান মসজিদের ইমামের শরীর স্পর্শ করে মারাত্মক অন্যায় করেছে। পূজারীদের চাপে আমি এই সালিশ করতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, আমি সামাজিকভাবে যতটুকু পারি সালিশের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু পাথরঘাটায় কী হলো, তাতে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই বেশি চিন্তিত। ২০২১ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও মাছ ব্যবসায়ী মোঃ নজরুল ইসলাম (৩৮) কে একই সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমনের হাতে বেধড়ক মারধর করা হয়।
নির্যাতিতা মাছ ব্যবসায়ী নজরুল ৮নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিএফডিসি মাছ পাইকার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। এর আগেও একজন সরকারি কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে এমপি রিমনের। গত ১৯ মে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজের দুই সহকারী অধ্যাপককে মারধরের অভিযোগ ওঠে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের বিরুদ্ধে।
লাঞ্ছিত দুই শিক্ষক হলেন পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ও গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন। শিক্ষক মারধরের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কলেজের অধ্যক্ষ পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। মাহাবুবুর রহমান। অভিযোগে বলা হয়, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার কলেজে ঢুকে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেনকে ‘তুমি ক্যাম্প করছ’ বলে চড় মারতে শুরু করে। শিক্ষকদের বিভিন্ন হুমকি দিয়ে কমনরুমে চলে যান।
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ডেমরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের এক দলিল লেখককে মারধরের অভিযোগ ওঠে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তাকে চেয়ার দিয়ে মারধোর করা ছাড়াও ভুক্তভোগীর মাথায় পানির গ্লাস ছুড়ে মারে এমপি। গালিগালাজ ছাড়াও প্রাণনাশের হুমকিও দেন। ভিকটিম নথির লেখকের নাম আনোয়ার হোসেন। তিনি ডেমরা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক এবং স্ট্যাম্প-ভেন্ডরস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। এ সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি সংসদ সদস্য।
গতকালও ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বর্তমান এমপিদের পাশাপাশি সাবেক এমপির হাতও সীমাবদ্ধ নেই। টেকনাফে দলের বর্ধিত সভায় তিন নেতাকে পিটিয়ে আলোচনায় এসেছেন নানা আলোচনা-সমালোচনার কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। মারধরের নেতারা হলেন- টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইউসুফ মনো, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. ইউসুফ ভুট্টো ও উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক।
নেতাদের মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বদিসহ তার ভাই আব্দুস শুক্কুরসহ কয়েকজন নেতা তাদের মারধর করছেন। এ ঘটনায় দলের ভেতরে-বাইরে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।