চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় গণপিটুনিতে নিহত দুজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৫) ও মোহাম্মদ ছালেক (৩৫), যাঁরা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাঁদের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় একাধিক মামলা রয়েছে, যা বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা হয়েছিল। তবে স্থানীয় জামায়াত নেতাদের দাবি, সালিস বৈঠকের নামে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে।
সোমবার রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের চূড়ামণি গ্রামের ছনখোলা এলাকায় গণপিটুনির এ ঘটনা ঘটে। এ সময় গোলাগুলিতে পাঁচজন আহত হন।
পুলিশ ও স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চার-পাঁচটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নেজাম, ছালেকসহ অন্তত ১২ জন ছনখোলা এলাকায় পৌঁছান। দোকানের সামনে নামার পরপরই মসজিদের মাইক থেকে ‘এলাকায় ডাকাত এসেছে’ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে গ্রামবাসী ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে, অনেকে তারাবির নামাজ শেষে ঘটনাস্থলে জড়ো হন।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে নেজামদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। তবে অন্যরা দ্রুত পালিয়ে গেলেও গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়েন নেজাম ও ছালেক। উত্তেজিত জনতা তাঁদের ওপর আক্রমণ চালালে ঘটনাস্থলেই তাঁরা প্রাণ হারান। এ ঘটনায় পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি বিদেশি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা উদ্ধার করেছে।
স্থানীয়রা জানান, নিহত নেজাম উদ্দিন জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের শাসনামলে দীর্ঘদিন এলাকা ছাড়া ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। এরপর তাঁর সমর্থকদের নিয়ে একটি গ্রুপ তৈরি হয়, যা প্রতিপক্ষের সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষে জড়িয়েছে।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং পুরোনো বিরোধের জেরেই এই গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের সেক্রেটারি জায়েদ হোছেন অভিযোগ করে বলেন, “নিহতরা আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সালিস বৈঠকের নামে ডেকে নিয়ে তাঁদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের মাথায় একের পর এক আঘাত করা হয়েছে।”
এদিকে, সাতকানিয়া থানার ওসি মো. জাহেদুল ইসলাম জানান, নিহত দুজনের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের আগের একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু মামলা বিচারাধীন, আর কিছু এখনো তদন্তাধীন।