আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি গত বেশকিছু দিন ধরেই মেয়র প্রার্থীদের মাঝে বেশ উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে, নাসিক নির্বাচনের শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের মাঝে বিভেদ লেগেই রয়েছে। এমনকি এ বিভেদে মাঝে মধ্যেই জড়িয়ে পড়েন শামীম ওসমানও।
নির্বাচনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া তৈমুর আলম খন্দকার। প্রতিদিনই নির্বাচনী প্রচারণা নানান কথা বলছেন তাঁরা। তাঁদের দুজনের কথা ছাপিয়ে দিন শেষে সেখানকার আলোচনার মূল বিষয়বস্তু শামীম ওসমান।
এত দিন আলোচনা সমালোচনা নিয়ে কথা না বললেও, তৈমুর ওসমান পরিবারের প্রার্থী আইভীর এমন অভিযোগে মুখ খুললেন তিনি। এরই মধ্যে বলেছেন, নিজের ব্যক্তিগত অবস্থান নিয়ে দুই দিনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করবেন।
আজ শনিবার নগরীর বন্দর এলাকায় প্রচারণায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আইভী অভিযোগ করে বলেন, ‘তৈমুর আলম খন্দকার গডফাদার শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের প্রার্থী। উনি বিএনপির প্রার্থী না, স্বতন্ত্র প্রার্থী না; তিনি ওসমান পরিবারের প্রার্থী।’
শামীম ওসমানের দাবি আইভী তাঁকে গডফাদার বলে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি আঙুল তুলেছেন। মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘দুই দিন আগে একটা ভিডিও দেখলাম সেখানে উনি (আইভী) বলছেন শামীম ওসমান আমাদের নেতা। উনি বড় ভাই, আওয়ামী লীগের সাংসদ। দুই দিনের মধ্যে গডফাদার হয়ে গেলাম?’
শামীম বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে আমার দল। আমি যদি গডফাদার হই। তাহলে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন কে? কাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলো? যে বলেছে, তাঁর (আইভী) কাছে জিজ্ঞেস করেন আপনি দুই দিন আগে এটা বলেছেন, দুই দিন পরে এটা বললেন। কোনটা সঠিক।’
তিনি বলেন, ‘দুই দিন আগে বললেন নেতা, এমপি, বড়ভাই। সব বললেন। এখন আজকে বললেন গডফাদার। আমি আওয়ামী লীগ করি, সেইও আওয়ামী লীগ করে। আমি এমপি হয়েছি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে। এখন আমি যদি গডফাদার হই, তাহলে আঙুলটা কার দিকে তোলা হলো?’
তাঁর বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে এগুলো নিয়ে দুই দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে জবাব দেবেন বলে জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘সেটা কালকেও হতে পারে, কিংবা পরশু হতে পারে। সেখানে আমি আমার কথা বলবো।’
তিনি বলেন, ‘আমি কোন সাবজেক্ট না। প্রথম দিক থেকেই চুপচাপ ছিলাম। এখনও আছি। তাহলে আমি নিউজ হবো কেন? যারা আমাকে নিউজ বানাতে চাচ্ছেন। আমিতো তাঁদের (কেন্দ্রীয় নেতা) বলেছি, কি আমার কারণটা। এখন ওনারা যদি কেউ কেউ ফায়দা লুটার চেষ্টা করেন। তাহলে এখন আমার দায়িত্ব হচ্ছে জনগণকে জানানো। জনগণ যদি সেটা সঠিক মনে করে, তাহলে সঠিক। এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত বিষয়, কোনো রাজনৈতিক নয়।’
আগামী ১৬ জানুয়ারি নাসিক নির্বাচন। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেননি স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর মনোনয়নের পর থেকে খুব বেশি গণমাধ্যমে কথা বলেননি শামীম ওসমান। প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষেও অবস্থান নেননি। গত ২০ ডিসেম্বর নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর নেতাদের বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন না শামীম ওসমান।
সম্প্রতি শামীম ওসমান জেলা প্রশাসন আয়োজিত ধলেশ্বর নদে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠানে যোগ দেন, নারায়ণগঞ্জ রাইফেলস ক্লাবে প্রায় দুই দফা নিজ উপজেলার চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাংগঠনিক বৈঠক করেন। তবে কোনো সভায় আইভী বা সিটি নির্বাচন বা আইভীর সমর্থনে মাঠে নামা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে সম্প্রতি নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, শামীম সময়মতোই নৌকার জন্য মাঠে নামবেন।
নির্বাচন যতই সামনে আসছে ততই আলাপ আলোচনা আর উত্তেজনা বাড়ছে নারায়ণগঞ্জে।আর সেই সাথে আলোচনা বাড়ছে শামীম ওসমানকে নিয়ে। কারন শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের একটি বড় নাম। তাই সিটি নির্বাচনের মত একটি বড় নির্বাচনে তার সাপোর্ট যে কোন প্রার্থীর কাছে একটি মুল্যবান জিনিস।