সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করা ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির হঠাৎ করে নিখোঁজ হওয়া। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এই ম্যাজিস্ট্রেট গত ৫ অক্টোবর রাত থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা বিতর্কিত মন্তব্য এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার অভিযোগের পর থেকেই তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দিনভর তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার কর্মস্থল লালমনিরহাটসহ ময়মনসিংহের বাসায় খোঁজ নিয়েও কোনো সন্ধান মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এইচ এম রকিব হায়দার জানান, ঊর্মি বর্তমানে লালমনিরহাটে নেই এবং তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। ঊর্মির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, গত দুই দিন ধরে তার মা-বাবার সাথেও যোগাযোগ নেই তার। তার মা নাসরিন জাহান, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার হাজী কাশেম আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, জানান, তিনি মেয়ে ঊর্মির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না এবং তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির এই নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিতর্কিত পোস্টের পরপরই ঘটে। গত শনিবার (৭ অক্টোবর) তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন, যেখানে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বিরূপ মন্তব্য করেন। তিনি তার পোস্টে লেখেন, “সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।” তার এই পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ঊর্মি।
এর আগে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদকে নিয়েও বিরূপ মন্তব্য করে একটি পোস্ট করেছিলেন, যা নিয়েও নানা মহলে আলোচনা হয়। এ ঘটনার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে নিয়োগ দেয় এবং পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ঊর্মির মা নাসরিন জাহান জানান, তার মেয়ে গত পরশু পর্যন্ত লালমনিরহাটে ছিলেন, তবে এখন কোথায় আছেন তা তার জানা নেই। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, হয়তো তার মেয়ের মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে, এবং এজন্যই তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। মায়ের ভাষ্যমতে, ঊর্মি ঢাকায় থাকতে পারেন।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানিয়েছেন, ঊর্মির বিষয়ে তাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তার কর্মস্থল থেকে এই মুহূর্তে কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, এবং প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন চলছে যে, তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি সীমান্ত পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে পালিয়ে যেতে পারেন। সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্য করার পর থেকেই ঊর্মির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, সরকারের বিরোধিতা করার কারণে ঊর্মি হয়তো গা ঢাকা দিয়ে বিদেশ চলে যেতে পারেন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করায় এই শঙ্কা আরও জোরালো হচ্ছে।
তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির পারিবারিক পরিচয় অনুযায়ী, তার বাবা মো. ইসমাইল হোসেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহীদ স্মৃতি কলেজের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও তিনি ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। তার মা নাসরিন জাহান বর্তমানে হাজী কাশেম আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পরিবারের এই ঐতিহ্যবাহী পেশাজীবী পরিচয়ের মধ্যে ঊর্মির এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং হঠাৎ নিখোঁজ হওয়া বিভিন্ন মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির হঠাৎ করে নিখোঁজ হওয়া এবং তার বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। তার অবস্থান জানার জন্য প্রশাসন এবং তার পরিবার উভয়েই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এ মুহূর্তে তার কোনো সুনির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় এবং তার বিরুদ্ধে গৃহীত আইনগত পদক্ষেপ কিভাবে বাস্তবায়িত হয় তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে সবাই।