প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে তার উন্নত চিকিৎসা নিতে দিন। আপনি তার প্রতি মানবতা দেখিয়েছেন, আরও কিছুটা দেখান। গতকাল (শুক্রবার) অর্থাৎ ৩ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত গণফোরামের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তিনি খালেদা জিয়ার বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে এমন কথা বলেন।
কাদের সিদ্দিকী আরো বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলবো, খালেদা জিয়া অনেক অসুস্থ, আপনি তাকে চিকিৎসা গ্রহন করার জন্য বিদেশে পাঠান। যদি আপনি মনে করে থাকেন খালেদা জিয়া বিদেশে গেলে আর ফিরে আসবেন না, তবে সেই ধারনা ঠিক নয়। সকলের আগেই আসবেন খালেদা জিয়া। ওয়ান-ইলেভেনের সময় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলে সেই সময়ে অনেকেই বিদেশে যেতে চেয়েছিলেন। খালেদা জিয়া সেই সময় বলেছিলেন, আমি ম’রতে পারি কিন্তু বিদেশে যাব না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ১৫ তারিখ জন্মদিন। আমি তাকে বলেছিলাম, ১৫ তারিখ আমার জন্মদিন, আমার বউয়ের জন্মদিন। কিন্তু আমার নেতা ১৫ আগস্ট প্রয়াত হয়েছেন। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ ১৫ আগস্ট আপনার জন্মদিন পালন পছন্দ করে না। উনি বলেছিলেন, এরকম একটা মহান নেতার প্রয়ানের দিন আমি জন্মদিন পালন করতে চাই না, আমার কোনো আগ্রহ নাই। দলের কর্মীরা জোর করেন। আমি সাথে সাথে বলেছিলাম, তাহলে আপনার দলের ওপর আপনার প্রভাব নাই? কর্তৃত্ব-নেতৃত্ব নাই? খালেদা জিয়া লজ্জা পেয়ে বলেছিলেন, আমি বিষয়টি দেখবো। আমার কারণে কি না জানি না অথবা তার বিবেকের কারণে সে বছর এবং তার পরের বছর তিনি জন্মদিন পালন করেননি।
মুক্তিযুদ্ধের এই বীর বলেন, শেখ হাসিনা এক সময় আমি বললেই শুনতেন। আজকে শুনতেও পারেন, নাও শুনতে পারেন। কিন্তু আপনি এত মানবতা দেখিয়েছেন, আরও মানবতা দেখান। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিন। এই মানবতার কথা যদি আপনি না বলতেন, তাহলে আরও বেশি মানবতা হতো। মানবতা দেখিয়ে কেউ বলে না যে আমি মানবতা দেখিয়েছি। এটা ভালো না। আপনি সুন্দর করে কথা বলেন, ভেবেচিন্তে কথা বলেন। দেখবেন আপনাকে অনেক মানুষ ভালোবাসবে। আমিতো আপনাকে ভালোবাসি, আমি আপনার সমালোচনা করতে পারি, আমি আপনার কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করি। আমি আপনার দলের সমালোচনা করি।
উল্লেখ্য, কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইলের বিভিন্ন আসন থেকে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে, সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৮ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালে সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং নিজের দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেন। এরপর ঐ আসনে একটি উপনির্বাচনের সূত্রপাত ঘটায়, যেখানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত মোমেন শাহজাহানের কাছে হেরে যান। সিদ্দিকী ২০০১ সালের বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল ৮ থেকে সংসদে নির্বাচিত হন।