Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / Countrywide / খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে রয়েছে দুটি পথ, চেষ্টায় পরিবার

খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে রয়েছে দুটি পথ, চেষ্টায় পরিবার

রাষ্ট্রপতির নিকট ক্ষমা চাওয়া, নাকি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সাজা মাফ-এই দুইভাবে তার চিকিৎসা সেবার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে, এ বিষয়গুলো আলোচনায় আটকে রয়েছে বিএনপি সভানেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি। গতকাল (শনিবার) বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, ক্ষমা চাইবেন না খালেদা জিয়া। ক্ষমা চাওয়ার অর্থ দাঁড়ায় দুর্নীতির দায়কে স্বীকার করে নেওয়া। রাষ্ট্রপতির নিকট যদি ক্ষমা চাওয়া হয় তাহলে তার সা’জা মাফ করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী মানবিকভাবে দেখবেন বলে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে খালেদা জিয়ার পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। পদ ছাড়ার পর তিনি কী করবেন তা এই মুহূর্তে জানা যায়নি।

নজরুল ইসলাম খান যিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ন সদস্য হিসেবে রয়েছেন তিনি গতকাল বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা যাতে দেওয়া সম্ভব হয় সেই জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি এখনো খারিজ করে দেয়নি সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি এখনও বিবেচনাধীন রয়েছে। গতকাল মতিঝিলে জোটের অন্যতম শরিক দল এনপিপি কর্তৃক আয়োজনকৃত দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, বিএনপি বা খালেদা জিয়ার শুভাকাঙ্ক্ষীরা নানাভাবে চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে কয়েকজন বুদ্ধিজীবী ও কূ’টনীতিক রয়েছেন।

গত বছরের এপ্রিলে নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে বাসায় নিয়ে আসার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরাই। সে সময় খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার নির্বাহী আদেশে সা’জা স্থগিত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বোন সেলিমা ইসলাম ও বোনের স্বামী রফিকুল ইসলামসহ তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর ধারাবাহিকতায় জে’লখানা থেকে বাসায় থাকার অনুমতি পান খালেদা জিয়া।

দুই দলের সূত্রগুলো জানায়, নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বিএনপির নেতারা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ভূমিকায় ছিলেন না। এবার চিকিৎসার বিষয়ে কোনো প্রক্রিয়া থাকলে তাতেও দল যুক্ত থাকবে কি না সন্দেহ।

এ বিষয়ে জানতে গতকাল রাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি।

তবে গত মঙ্গলবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের একটি প্রতিনিধিদল আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনাদের আবেদন আমি পরীক্ষা করে দেখব।’ তিনি বলেন, ‘আমি শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যখন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হয় তখন কিন্তু উনার পরিবারের যে আবেদন ছিল, সেটাকে মানবিক দিক থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখেছেন। তখন কিন্তু কোনো দাবি তুলতে হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই উনাকে মুক্ত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই মানবিকতা দেখাতে জানেন।’

আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, বিষয়টি এখনো প্রিম্যাচিউর (পূর্ণতা পায়নি)। আপনাদের যদি কিছু বলে দিই, তা ঠিক হবে না। আমাকে একটু সময় দিন।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নী’তি মা’মলায় সা’জা দেওয়া হয় খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ চায় খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে নয়, আইনি মাধ্যমে সমাধান হোক। আইনি উপায় হল দোষ স্বীকার করা এবং রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া। তাতে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার পথ সুগম হতে পারে। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার পরিবার বা বিএনপির যেকোনো সদস্যকে আবেদন করতে হবে। এসব নেতারা মনে করেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা না চেয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হলে বিএনপি এটাকে তাদের রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে ঘোষণা করবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ দেশের একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যমকে বলেন, “বিএনপি বারবার নির্বাহী আদেশের কথা বলছে কেন জানি না। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আইনি পথ তারা অনুসরণ করছে না।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গনমাধ্যমকে বলেন, সরকারের কোনো উদ্যোগে খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে বিএনপি বলবে, আন্দো’লনের ভ’য়ে সরকার পিছু হটেছে। তাই রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে গতকাল রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যমকে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে তো আমরা প্রতিটি অনুষ্ঠান থেকে বলছি। সেগুলো তো সরকারের কাছে যাচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। কারণ আমরা মনে করি, চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে যে মামলা এবং মামলার রায়, সবই রাজনৈতিক।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনও একই কথা বললেন একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যমকে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া মানে হলো দায় স্বীকার করে মার্জনার আবেদন করা। এটা বেগম জিয়া চাইলে অনেক আগেই দায়মুক্তি নিতে পারতেন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে আরেকটি নির্বাহী আদেশ দিয়ে বলতে পারেন, দ’ণ্ডবিধির ৪০১ ধারায় বেগম জিয়াকে যে শর্তে সা’জা স্থগিত করে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, সেই শর্তগুলো বাতিল করা হলো। তিনি এখন শর্তহীনভাবে যেকোনো স্থানে চিকিৎসা নিতে পারবেন। অর্থাৎ তাঁরা চাইলে আরেকটি নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন। ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে ‘শর্তসাপেক্ষে অথবা শর্তহীনভাবে’।

জানতে চাইলে গতকাল রাতে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো আবেদন করেছি তাঁকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করতে। সরকারের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আমাদের জানানো হয়নি।’

রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত পরিবারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে গত শুক্রবার সেলিমা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ওরা (আওয়ামী লীগ নেতারা) কেন ভুলে যায়, খালেদা জিয়া ৯ বছর স্বৈরাচা’রবিরো’ধী আ’ন্দোলন করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রয়োজনে খালেদা জিয়া মা’/রা যাবে, তবু ক্ষমা চেয়ে আবেদন করা হবে না।’

খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার লক্ষ্যে শেষ বার গেল ১১ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন শামীম এস্কান্দার যিনি খালেদা জিয়ার ছোট ভাই। এর পরের দিন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন। অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বিএনপি নেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে দয়িত্ব পালন করছেন তিনি গত সোমবার অর্থাৎ ১৮ নভেম্বর আবেদন সম্পর্কে সাংবাদিকদের এমন ধরনের তথ্য জানান। তিনি বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট এটি পঞ্চম আবেদন। ম্যাডামকে বিদেশে নিয়ে যাতে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা যায় তার জন্য তার জামিন মঞ্জুর করে তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়।

খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা অধিকতর জরুরী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন মন্তব্য করেন মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন খালেদা জিয়া পরিপাকতন্ত্রে র’ক্ত ক্ষরন হচ্ছে যেটার জন্য খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকেরা থেমে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে এই চিকিৎসার জন্য যে সমস্ত মেডিকেল ইনস্ট্রুমেন্টস দরকার সেগুলো বাংলাদেশে নেই। তাই তাকে যথাশীঘ্র বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নেতাকর্মীরা সরকারের অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে। তবে সরকার কী করবে সেটা এখন দেখার বিষয়।

About

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *