বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা শর্তসাপেক্ষে স্থগিত করা হয়েছে। শর্তসাপেক্ষ মুক্তি বাতিল করার অবস্থানে যাওয়ার পরে অন্যান্য বিবেচনা করা যেতে পারে।
আনিসুল হক বলেন, দেশে আইনের শাসন আছে। আদালত খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছেন। এখন আইন পরিবর্তন না করে তাকে মুক্তি দেওয়া যাবে না। বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে হলে তার শর্তসাপেক্ষে মুক্তি প্রত্যাহার করতে হবে।
এর আগে গত শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। পরে নথির আলোকে বিষয়টি বিবেচনা করবে আইন মন্ত্রণালয়।
পরদিন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একজন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী। বিদেশে চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন করা হয়নি। আর বিদেশিদের চিকিৎসার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই, এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।
তবে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, বেগম জিয়াকে ৫ সেপ্টেম্বর বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত এবং সপ্তমবারের মতো বর্ধিত মুক্তির মেয়াদ রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) শেষ হয়েছে। এর আগে তার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানায় পরিবার। বেগম জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে এ অনুরোধ জানিয়েছেন। চিঠিতে ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। এটি ৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন। নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত হওয়ায় বর্তমানে তিনি কারাগারের বাইরে রয়েছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দু/র্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। রায়ের পর তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। এরপর গত ৩০ অক্টোবর এ মামলায় আপিলের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট তার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দু/র্নীতি মামলায় একই আদালত খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন।
২০২০ সালের মার্চ মাসে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে রোগ শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়। এরপর থেকে মুক্তির সময় বেড়ে যাওয়ায় তাকে আর কারাগারে যেতে হয়নি।