সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি সুস্থ হয়ে যান তাহলে সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আবারও তিনি রাজপথে নামবেন, এই সকল কারনে বিএনপি নেত্রীকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিয়ে তাকে সুস্থ করতে চাইছেন না। তিনি বলেন, তিনি যদি সুস্থ হয়ে জনগণের কাছে ফিরে আসেন তাহলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই সরকারের দুর্নীতি, গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং জনগণের অধিকার আদায়ে কাজ করবেন। আর তার পেছনে দেশের মানুষ হেমিল্টনের বাঁশিবাদকের মতো দেশনেত্রীকে অনুসরণ করবে। এ কারণে আমাদের নেত্রীকে মুক্তি দিতে চান না এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে কোনো সুযোগ দিতে চাইছেন না। ‘
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার উন্নতির দাবিতে আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা শুধু বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাই নয়; আসলে দেশের সব মানুষ আজ কারাগারে দিন কাটাচ্ছে। শান্তি নেই, স্বস্তি নেই। কেউ হাসিমুখে কথা বলে না, কেউ নিরাপদে রাস্তায় বের হতে পারে না। তারা জীবিকা নির্বাহ করতে পারে না। তাদের অবস্থা ভয়াবহ।’
তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, অত্যন্ত অসুস্থ, গু’রুতর অসুস্থ। প্রতিদিন তার চিকিৎসকরা দেশনেত্রীর জীবন রক্ষার চেষ্টা করছেন। কেন তাকে উন্নত চিকিৎসা করতে বিদেশ যেতে দেওয়া হচ্ছে না? কেন তাকে শর্তসাপেক্ষে আটক রাখা হয়েছে? একটাই মাত্র কারণ। ’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একমাত্র নেতা যিনি বাংলাদেশের জন্ম থেকে মানুষের জন্য কাজ করছেন, কথা বলেছেন। তিনি যখন বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ ৯ বছর পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন। যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করেছেন। খেটে খাওয়া কৃষক, শ্রমিক, মজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কাজ করেছেন। ‘
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ নেতারা অনেক বড় বড় কথা বলেন। মন্ত্রীরা উন্নয়ন উন্নয়ন বলতে বলতে বলতে তাদের ফুলঝুড়ি ফোটে। কী উন্নয়ন করেছেন?’
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন দিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আবার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বাস ভাড়া কমানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। তারা বলছে, হাফ পাস দিতে হবে। কেন বলছে? কারণ তাদের লেখাপড়ায় এখন খরচ অনেক বেশি। তাদের মা-বাবা এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা হিমশিম খাচ্ছে। একদিকে চাল, ডাল, তেল ও লবণের দাম বেড়ে গেছে, অন্যদিকে শিক্ষা উপকরণের দামও বেড়েছে। এর সঙ্গে বাসভাড়া আরও বাড়িয়ে দিয়ে চর’ম বিপ’র্যয়ের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ’
‘আপনারা দেখেছেন, এ গণবিরো’ধী সরকার তারা প্রথমে ডিজেল ও কিরোসিনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বাস মালিক ও শ্রমিকদের ধর্মঘটে নামিয়ে দেওয়া হলো যে তাদের ভাড়া বাড়াতে হবে। এরপর বাসভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হলো। এসব কার স্বার্থে বাড়ানো হলো? আওয়ামী লীগের এসব দুর্নীতিপরায়ন সিন্ডিকেটের স্বার্থে। আওয়ামী লীগ নিজেদের পকেট ভারী করতে জনগণের পকেট কাটছে তারা’, যোগ করেন ফখরুল।
তিনি আরও বলেন,‘শিক্ষার্থীরা বাসভাড়া হাফ পাশের দাবিতে রাস্তায় আন্দোলন করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের একজন মন্ত্রী বলছেন, আমরা বিআরটিসি’র ভাড়া কমালাম, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসের তো আমরা কমাতে পারব না।’
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তোমরা প্রাইভেট টেলিফোন মোবাইল নিয়ন্ত্রণ করতে পার, তোমরা প্রাইভেট সব কিছু, ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পার, শিক্ষার্থীরা যে আ’ন্দোলন করছে সেখানে ভর্তুকি দিতে পার না কেন? তাদের লেখাপড়ার জন্য, তাদের শিক্ষার জন্য ছেলেমেয়েদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আমি এ সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের দাবির প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন করছি। এবং দাবি করছি, অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের হাফ পাশ ভাড়ার দাবি সরকারকে মেনে নিতে। প্রয়োজনে সরকার ভর্তুকি দেবে। ’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘একটা দুটা কথা নয়; প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে ব্যর্থ হয়ে। এমন ব্যর্থ হয়েছে চুরি ছাড়া কিছু করেনি। এখন হাসপাতালে যাবেন কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। করোনার সময় হাসপাতালে সিট পাওয়া যায়নি, অক্সিজেন পাওয়া যায়নি, ডাক্তার পাওয়া যায়নি এবং ওষুধপত্রও পাওয়া যায়নি। টিকা নিয়ে কী কেলেঙ্কারি করেছে তাও আপনারা জানেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মেট্রোরেল ও উড়াল সেতু বানাচ্ছে। গত ১০ বছর ধরে মেট্রোরেলের জন্য রাস্তাঘাট কেটে কেটে রাখা হয়েছে। মেট্রোরেল এখনো হচ্ছে না। খরচের জন্য যে টাকা ধরা হয়েছিল তাও ১০ গুণ বাড়িয়েছে। পদ্মা সেতুর কথা বলে। সেটা ছিল ১০ হাজার কোটি টাকা, যা এখন হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। পত্রিকায় দেখলাম ভাঙ্গা থেকে মাওয়া এক কিলোমিটার সড়ক করতে খরচ হয়েছে দুই’শ কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিতে এত খরচ হয় না।’
‘এসব কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করতে দিতে চায় না। যদি তিনি সুস্থ হয়ে জনগণের মাঝে ফিরে আসে তাহলে এ সরকারের দুর্নীতি, গণবিরো’ধী কাজের প্রতিবাদ, জনগণের অধিকার আদায়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কাজ করবেন। এবং তার পেছনে দেশের মানুষ হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো দেশনেত্রীর পেছনে আসবে। এ কারণে তাকে মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে অনুমতি দিতে চায় না’, বলেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপি মহাসচিব যোগ করে বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি যে, দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে যে মামলা দেওয়া হয়েছে সেটি একটি বানো’য়াট ও মিথ্যা মাম’লা। তার বিচারের নামে করা হয়েছে প্রহসন। রাজনৈতিক এবং প্রতিহিংসা বশত তাকে মিথ্যা অভিযোগে সাজা দেওয়া হয়েছে। স্বার্থচিন্তা করা ক্ষমতাসীনরা আইনের ৪০১ ধারা দেখিয়েছে। ওই আইনে স্পষ্ট বলা আছে, সরকার, একমাত্র সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে দিতে পারে।’
ফখরুল আরো বলেন, “আমরা সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণভাবে এ দাবি করছি। আমরা বারবার বলেছি, আপনারা (সরকার) তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেন। আমরা এটা বুঝি না, আমাদের চিন্তায়ও আসে না- সমস্যা কীসে? আইনের কথা বলতে শুরু করেছেন কেন? আপনার আইনকে ভুলভাবে দেখিয়ে যাচ্ছেন। তাই তাকে বিদেশে পাঠাতে কাজ শুরু করুন। আপনারা যদি সত্যিই দেশে শান্তি বিরাজ করুক এটা চান, স্থিতিশীলতা চেয়ে থাকেন, গণতন্ত্র ফিরে আসুক এটা চান, দেশে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে যদি চান তাহলে আপনাদের বেগম খালেদা জিয়াকে অবশ্যই লাগবে। তা না হলে এই দেশে কেউ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারবে না।’