Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / opinion / খালেদা জিয়ার বাসায় চৌকি, টের পাওয়া যাচ্ছে ১০ ডিসেম্বর আসলে কি হতে যাচ্ছে: মাহবুব

খালেদা জিয়ার বাসায় চৌকি, টের পাওয়া যাচ্ছে ১০ ডিসেম্বর আসলে কি হতে যাচ্ছে: মাহবুব

আগামী ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি বিশেষ দিন।এ দিনটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে একটি ইতিহাস। কারন এ দিন বিএনপি তাদের স্মরণকালের সব থেকে বড় সমাবেশ অন্তত ক্ষমতা হারানোর পরে তারা এ ধরনের আন্দোলন আর করেনি। আর এই কারনে এই তারিখটি নিয়ে এখন সারা দেশে চলছে তুমুল আলোচনা। এবার এ নিয়ে একটি বিশেষ লেখনী লিখেছেন মাহবুব মোর্শেদ। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনী তুলে ধরা হলো হুবহু:-

পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, বিএনপি বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছে। ১০ ডিসেম্বর তারা কোথায় সমাবেশ করবে এখনো সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। শেষ সময়ে এসে তারা ভেন্যু নিয়ে অনেকটা নমনীয়। পুলিশের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী ও নয়া পল্টনের বিকল্প নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি। বিকল্প হিসেবে আরামবাগের কথাও আলোচনায় এসেছে। বিএনপি নেতাদের নরম মনোভাব এবং সরকারের গরম আচরণ ভিন্ন রকমের বার্তা দিচ্ছে। বিএনপির কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব টের পাওয়া যাচ্ছে।

১০ তারিখ নিয়ে বিএনপি নেতা আমানুল্লাহ আমানের গরম বক্তব্যের পর আমি বলেছিলাম, এ ধরনের বক্তব্য বিএনপির আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তখন অনেকেই বলেছিলেন, রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে একটা ডেটলাইন ঘোষণা করা দোষের কিছু নয়। এ ধরনের তারিখ আওয়ামী লীগও অতীতে দিয়েছে। আব্দুল জলিলের ৩০ এপ্রিল ডেটলাইনের কথা এখনো লোকের আলোচনায় চলে আসে। অবশ্য বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে ১০ ডিসেম্বর বিষয়ে আমানুল্লাহ আমানের মতো বক্তব্য আসেনি, বরং তারা বারবারই বলেছেন ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশের শেষ কর্মসূচি হিসেবে ঢাকার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। একে কেন্দ্র করে সরকার পতনের কোনো পরিকল্পনা বা অবস্থান পরিকল্পনা বিএনপির নেই। কিন্তু সরকার শুরু থেকেই আমানুল্লাহ আমানের বক্তব্য ধরে আগাচ্ছে। সরকারের তরফে ১০ ডিসেম্বর ফোকাস করা হয়েছে এবং প্রচার-প্রচারণায় এটাকে এত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হয়েছে যে বিএনপি’র জন্য ১০ ডিসেম্বর এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপযুক্ত কৌশল নিয়ে এটা মোকাবেলা করতে না পারলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা স্পষ্ট করে বলা যায়।

গত আগস্ট থেকে বিএনপি নানা বড় কর্মসূচি পালন করেছে। দেশের পরিস্থিতি তাদের সে কর্মসূচিকে বেগবান করেছে। জ্বালানি সংকট বিদ্যুৎ সংকট ডলার সংকট দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি বিএনপি’র জনসমর্থন বাড়াতে সহযোগিতা করেছে। পরে তারা দেশব্যাপী জনসমাবেশে ডাক দিলে সেগুলোর সবকটি সফল হয়েছে। পরিবহন ধর্মঘট সহ সরকারের নানা বাধা সত্ত্বেও সমাবেশগুলোর সাফল্য যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য ঈর্ষণীয় ছিল। এই সমাবেশগুলোর সময়ে বিএনপির অন্তত ৮ জন নেতাকর্মী নি**হত হয়েছেন। সমাবেশগুলোতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য ছিল। সারাদেশে নতুন করে সমর্থকদের মধ্যে আশা জাগাতে পেরেছে সমাবেশগুলো। বলতে গেলে ২০১৩-১৪ সালের পর বিএনপি এত সফলভাবে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি।

তবে সফলভাবে কর্মসূচি পালন করতে না পারলেও, এই কথা সত্য ঢাকার বাইরে বিএনপির জনসমর্থন বেশ পোক্ত। তারা চাইলে ঢাকার বাইরে এ ধরনের সমাবেশ কর্মসূচি আগেও সফলভাবে করতে পারতো। অনেকেরই ২০১৩-১৪ সালের কর্মসূচির কথা মনে পড়বে। সে সময় বিএনপি জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ঢাকা সারা দেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ১৪ সালের ইলেকশনের পর হঠাৎ করে আন্দোলন থেকে সরে আসে বিএনপি। সেই সরে আসার পর তারা আর বড় আকারে মাঠের ব্যাপারে আগ্রহী হয়নি। করছি, করবো বলে সময় কাটিয়েছে। এবার এই প্রথম তারা প্রায় সাত বছর পরে বড় আকারে মাঠে নামল। ২০১৪ সালে তাদের বড় আন্দোলন ঢাকায় তেমন রেখাপাত করতে পারেনি। এবারের আন্দোলনে ঢাকায় যদি বিএনপি ব্যর্থ হয় তবে আবারো নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। ঢাকায় শক্তি দেখানোটা তাদের জন্য খুব জরুরি।

সরকারও এ বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ। ফলে বিএনপি যেন ঢাকায় কোনোভাবে সফল সমাবেশ করতে না পারে সেজন্য সব প্রস্তুতি তারা নিয়ে নিয়েছে। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, ভয়ভীতি দেখানো, সরাসরি আক্রমণ, খালেদা জিয়ার বাসায় চৌকি, নেতাদের বাসায় পুলিশ প্রহরাসহ প্রত্যেকটি উদ্যোগ ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে। সরকারের উদ্যোগ দেখে মনে হয় প্রতিটি গুজব প্রতিটি সম্ভাবনা তারা মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত। বিএনপির শীর্ষ নেতারা মুখে যাই বলুন সরকার সম্ভবত দেশের বাইরে থেকে চালানো সকল প্রচারণাকে আমলে নিচ্ছে। সরকারের এই কঠোর মনোভাবের ফলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। বিশেষ করে সাত আটটি হ***কাণ্ডের ঘটনা ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবুও তারা কঠোর পদক্ষেপ নিতে পিছপা হচ্ছে না।

এ অবস্থায় ঢাকার গণসমাবেশের স্থান ঠিক না হওয়া একটা বড় দুর্বলতা। ঢাকার বাইরের সমাবেশগুলোতে যে ট্রেন্ড দেখা গিয়েছিল তাতে মানুষজন ধর্মঘট এড়িয়ে দুতিন দিন আগেই সমাবেশ স্থলে এসে অবস্থান নিয়ে থাকতে শুরু করেছিল। ঢাকায় সেটি ঘটবে না বলেই মনে হয়। স্থান ঠিক না হলে কর্মীরা কোথায় এসে বসবে? পুলিশের অভিযানের মধ্যে তারা কোথাও যে অবস্থান করবে তারও উপায় নেই। ধারণা করা যায়, ১০ তারিখের দু-তিন দিন আগে থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হবে। সেক্ষেত্রে তাদের আসার কোনো উপায় নেই। এ অবস্থায় একটি বড় সমাবেশ করা বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

১০ ডিসেম্বর নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। কিন্তু আমার মনে হয় ১০ ডিসেম্বর বা তার আগে পরে কোনো কিছুই ঘটবে না। সারাদেশে বিএনপির সমাবেশগুলো নিশ্চয়ই চমকপ্রদ ছিল।

দলটিকে দমানোর জন্য সরকার গত চোদ্দ বছরে সম্ভব সকল রকম অস্ত্র প্রয়োগ করেছে। বলতে গেলে, তাদের হাতে আর কোনো অস্ত্র অবশিষ্ট নেই যা দিয়ে তারা নতুন করে বিএনপিকে দমন করতে পারে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে জেলে নিক্ষেপ থেকে শুরু করে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা গ্রেফতার ইত্যাদি সমস্ত কিছু হয়ে গেছে। অনেকেই বলতেন বিএনপি শেষ হয়ে গেছে। হয়তো সেটা সত্যও ছিল কিছুটা। ফলে এবারের বিএনপির উত্থান অনেকটা ধ্বংসস্তূপ থেকে। ফলে এটা বিস্ময়কর। স্বাভাবিকভাবেই আগে প্রয়োগ করা অস্ত্র দিয়ে বিএনপিকে নতুনভাবে দমন করা খানিকটা কঠিন। তবে বিএনপির এই আন্দোলনের বা উত্থানের প্রেক্ষাপট খানিকটা ভিন্ন। বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেকোনো কারণেই হোক বিএনপি’র নেতারা মনে করেছেন তারা যে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি সেটা দেখানো দরকার। ফলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সমর্থন জড়ো করে দ্রুত কয়েকটি সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করার প্রয়োজন অনুভব করেছেন তারা। এবং এতে সফল হয়েছেন। দ্রুত আলোচনার বাইরে থাকা বিএনপি আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। আওয়ামী লীগও চাপে পড়েছে। ফলে জনসমর্থন দেখানোর জন্য সরকারকেও তড়িঘড়ি বেশ কিছু সমাবেশ কর্মসূচি পালন করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগও দেখাতে চেয়েছে, আমাদের জনসমর্থন কম নয়। সরকার কিছুটা সফল হয়েছে।

এ অবস্থায় সরকারের কর্মসূচিগুলো বিএনপি’র কর্মসূচি প্রতিক্রিয়া হিসেবে পালিত হয়েছে বলা যায়।

বিএনপির আগেই আওয়ামী লীগ ঢাকায় বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছে। সেগুলোতে জনসমাবেশ ভাল হয়েছিল। এখন সরকার দেখাতে চায় তাদের সে সমাবেশগুলোর চেয়ে বিএনপির সমাবেশে কম লোক উপস্থিত হয়েছে।

আপাতত বিএনপি’র সামনে চ্যালেঞ্জ হলো, গণসমাবেশ কর্মসূচির শেষটা সফলভাবে করা। এক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হলে নতুন করে ঢাকায় প্রভাব সৃষ্টি করা কঠিন হবে।

প্রসঙ্গত, এ দিকে এ নিয়ে সারা দেশের মানুষের মধ্যে চলছে বেশ উত্তেজনা। বিশেষ করে সরকার পক্ষ থেকেঃ এই আন্দোলন ঠেকানো এবং বিএনপির যে কোনো উপায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত করা। এ ছাড়াও বিএনপির সমাবেশের আগে রাজনধানী ঢাকায় বিশেষ অভিযানও যোগ করেছে ভিন্ন এক মাত্রা।

About Rasel Khalifa

Check Also

আগামীকাল ক্যান্টনম্যান্টে হামলার পরিকল্পনা করেছে আঃলীগ, মিটিংয়ের ভিডিও আসছে: ইলিয়াস হোসেন

ড. বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল শীঘ্রই মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতে খুব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *