সম্প্রতি দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য নিয়ে আলোচনা সমলোচনা হচ্ছে ব্যাপক। বিএনপি যদি নতুন করে আবারো কোনো ঝামেলা শুরু করে তাহলে বেগম খালেদা জিয়াকে আবারো জেলে পাঠাবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর এই বিষয়টি পৌঁছে গেছে মার্কিন মুল্লুক পর্যন্ত।
এ নিয়ে সোমবার পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র নেড প্রাইস নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আন্দোলনকারী বিরোধী দল বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুমকির বিষয়ে এই মন্তব্য করেন। সম্প্রতি বিএনপিকে হুমকি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র দফতরের এই মুখপাত্র বলেন, জনগণকে তাদের পছন্দের সরকার বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। সুশীল সমাজের ব্যাপক ভিত্তিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
একই সঙ্গে বিরোধী আন্দোলনে কোনো ধরনের ভয়ভীতি বা বাধা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ পথে চলার জন্য মার্কিন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির বার্তা সরকারকে মনে করিয়ে দেন নেড প্রাইস।
ব্রিফিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদক মুশফিকুল ফজল আনসারী বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হুমকির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং বলেন, “বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ মানুষ নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে হুমকি দিয়েছেন, আন্দোলনের নামে বাড়াবাড়ি করলে বিএনপি বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে আবারও কারাগারে পাঠানো হবে। শর্তসাপেক্ষে বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র দফতরের মানবাধিকার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই মামলা খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার এক ধরনের ষড়যন্ত্র। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
জবাবে, নেড প্রাইস মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, “বিশ্বব্যাপী পররাষ্ট্রনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র যে দুটি বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় তা হল গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার। আমরা সবসময় এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে আসছি। ”
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আইনের শাসন ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, “যেসব দেশের সঙ্গে আমরা এই বিষয়ে কথা বলেছি সেগুলির মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এর মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্রের গুরুত্বের ওপর জোর দিই। সংবিধান, আইনের শাসন এবং সকল বাংলাদেশীর মানবাধিকার রক্ষাকে শক্তিশালী করা। আমি দিচ্ছি. এর আগে একটি বিষয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। আমি এখানে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অধিকারের কথাও বলেছি। আবারও সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, “আমাদের আহ্বানের উদ্দেশ্য হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা, যার মধ্যে সংবিধান, আইনের শাসন বাস্তবায়ন, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং বাংলাদেশের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
নেড প্রাইস বলেন, “আমরা আসন্ন নির্বাচনে সুশীল সমাজ এবং বাংলাদেশের জনগণের অংশগ্রহণ চাই যাতে তারা স্বাধীনভাবে তাদের সরকার নির্বাচন করতে পারে। আমরা আশা করি এবং বাংলাদেশ সরকারকে তা করার আহ্বান জানাই।”
বিরোধীদের ওপর চলমান দমন-পীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে নেড প্রাইস বলেন, “আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই বিরোধীদের ওপর বলপ্রয়োগ বন্ধ করতে এবং তাদের অবাধে জড়ো হতে এবং তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার অনুমতি দিতে।”
প্রসঙ্গত, গেলো বেশ কিছুদিন আগে নেতা কর্মীদের সাথে মতবিনয় করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন বিএনপি যে আন্দোলন করছে সেই আন্দোলনে যদি জনগণের ক্ষতি হয় তাহলে আবারো খালেদা জিয়াকে পাঠানো হবে কারাগারে। আর সেই থেকেই এ নিয়ে সারা দেশে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।