দেশের শীর্ষ শিরোনামে পরিনত হয়েছেন বেগম জিয়া। তার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সরকাদলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বিএনপি নেতাদের মধ্যে নানা তর্ক-বির্তক চলছে। তবে বিএনপি দল এবং বেগম জিয়ার পরিবার খালেদার উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বিদেশে নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে। তবে এই বিষয়ে সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এই বিষয়ে তিনি কোন হস্তক্ষেপ করবেন না। বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে। তবে এবার ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কথা জানালেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া নিয়ে সরকারি দলের নেতাদের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বলেছেন, মাথা নত করার জন্য খালেদা জিয়ার জন্ম হয়নি। জনগণ ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে তিনি আপস করতে জানেন না। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ডা. মিলন দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘৯০-র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। গয়েশ্বর বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা বলেন, গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে ক্ষমা চাইতে হবে। কার কাছে? ক্ষমা চাওয়ার লোকটা কে? বর্তমানে জীবিতদের মধ্যে এই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ও জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনে খালেদা জিয়ার চেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার কে করেছেন? রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলুন। খালেদা জিয়া ক্ষমা চাইবে কার কাছে? যারা নিজেরা অপরাধী, যারা বৈধ নয় এবং আইনসিদ্ধ নয় তাদের কাছে? তারা কেন আইনের কথা বলেন? আইনমন্ত্রী কি জানেন না রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা হলে সর্বোচ্চ আদালত থেকে চূড়ান্ত রায় হতে হয়? আইনমন্ত্রী কি জানেন না পেন্ডিং মামলায় রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া যায় না? খালেদা জিয়া লড়তে জানেন, ভাঙতে জানেন কিন্তু গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপস করতে জানেন না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এখানে আজকে অনেক কথা হলো, বাকি আছে কিছু করার। এখানে যারা আছেন তাদের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা, আপনারা গণতন্ত্র মুক্ত করবেন। গণতন্ত্র মুক্ত করা মানে গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা।’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি খালেদা জিয়ার হাতে গণতন্ত্র তুলে দিতে পারি তাহলে তিনিই সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন।’ অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবেক ও বর্তমান ছাত্র নেতাদের উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর বলেন, ‘অতীতের আন্দোলন আর এখনকার আন্দোলন এক রকম হবে না, কারণ প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আধুনিক প্রযুক্তির রোষানলে আন্দোলন সংগ্রাম দৃশ্যমান হতে পারে না। প্রযুক্তি যেমন কারো জন্য আশীর্বাদ, কারো জন্য অভিশাপও। ছাত্রদের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। নির্ধারিত কোনো ছাত্র সংগঠন আগে তারা যেটা পারত, বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হয় বর্তমান ছাত্ররাই পারবে। ছাত্ররা তাদের নিজেদের দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে। বাসের চাকায় একজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর ছাত্ররা মাঠে নেমেছে। হয়ত তাদের সংগঠিত নেতা না থাকলেও চেতনায় তারা ঐক্যবদ্ধ। এ কারণে তারা পারছে। সুতরাং নতুন প্রেক্ষাপটে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।’ গয়েশ্বর বলেন, ‘আমরা একটা আজব দেশে বাস করছি। যেখানে চিকিৎসার দাবিতেও আন্দোলন করতে হয়। সবাইকে আহ্বান জানাব, এ আন্দোলনই যেন সরকার পতন আন্দোলন হয়।’ খালেদা জিয়া আজ জীবন-মৃ/ত্যু/র সন্ধিক্ষণে উল্লেখ করে আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘নেতৃবৃন্দকে বলব, আপনারা কর্মসূচি দিন আমরা তা সফল করব।’
এমনিতেই দীর্ঘ দিন ধরে শারীরিক ভাবে নানা ধরনের জটিলতায় ভুগছেন বেগম জিয়া। এবং বৈশ্বিক চলমান মহামারিরও শিকার হয়েছেন তিনি। জরুরি ভাবে তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। তবে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে এক্ষেত্রে। বিশেষ করে সরকারের স্বদইচ্ছা না থাকায় বিদেশ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে নানা। এমনকি বেগম জিয়ার পক্ষ নিয়ে সুশীল সমাজের অনেকেই শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তাকে বিদেশ নেওয়ার অনুমতির জন্য।