Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / খামখা লিখে লাভ কী, লিখে তাকসিম এ খানকে নামানো যাবে না

খামখা লিখে লাভ কী, লিখে তাকসিম এ খানকে নামানো যাবে না

সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠার পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার হয় নানা মহলে। কিন্তু তাকে কিছু করার মত ক্ষমতা সরকারে নেই অপ্রীয় কথা হলেও সত্যটা এমন। একটি সূত্রে জানা যায় তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কিছু করতে গেলে তিনি সেটি ম্যানেজ করে ফেলেন। ওয়াসার ‘অনলাইন’ এমডির খুঁটির জোর কোথায় সম্পর্কে যা জানাগেল।

ধান ভানতে শীবের গীত। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের কথা বলতে গিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গ। দুটি ভিন্ন বিষয় হলেও একটা জায়গায় মিল আছে। কোথায় মিল আছে সেটা পরিস্কার হবে একটু পরে।

গত ২৫ আগস্ট তারিখে বামজোটের আধাবেলা হরতাল পালন করা হয়েছে। হরতালের দিন সকাল মিরপুরের বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছি তেজগাঁও জন্য। হরতাল এখন আগের দিনের চরিত্রে নেই। তাই রাস্তাঘাটে যানবাহনের কমতি থাকে না।রাস্তায় নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশাওয়ালাকে বললাম, যাবেন কিনা? বললেন, ভাড়া দিতে হবে ৪০০ টাকা। ভাড়া শুনে হাসি চলে এলো। সামলে নিয়ে বললাম, আপনার লোকসান হয়ে যাবে না, এই ভাড়ায়? এবার আমার কথা শুনে অটোরিকশাওয়ালা থমকে গেলেন। বললেন, আপনি রসিক আছেন! ৩০০ টাকায় রফা হয়েছিল সেই ভাড়া। অটোরিকশায় উঠতেই চালক বললেন, ‘খামোখা হরতাল কইরা লাভ কী! হরতাল দিয়া সরকার নামাইতে পারত না।’ অটোরিকশাওয়ালার কথা শুনে তাজ্জব হয়ে যাই। অনেকক্ষণ পরে বললাম, এই হরতাল সরকার পতনের জন্য ডাকা হয়নি। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে তার প্রতিবাদে ডাকা হয়েছে। অটোরিকশাচালকের মুখে সেই আগের কথারই প্রতিধ্বনি।

এবার আসি তাকসিম এ খানের কথা। তাকসিম এ খান ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ‘অনলাইনে’ অফিস করতে চান তিনি। এই সময়ে তিনি অবস্থান করতে চান আমেরিকায়। ছয় সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে যেতে চান তাকসিম এ খান। তিনি অন্য কাউকে এমডির দায়িত্ব না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বসে ‘অন ডিউটি’তে থাকবেন বলে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো আবেদনে উল্লেখ করেছেন। এবারই প্রথম নয়। এর আগেও গত বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই তিন মাস তিনি যুক্তরাষ্ট্র্র ছিলেন। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১১ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। সরকারি চাকরির বিধি বলছে, এভাবে তিনি বিদেশে অবস্থান করতে পারেন না।

কিন্তু নামটি তখন তাকসিম এ খান তো সবই সম্ভব। ওয়াসার পানির পান নিয়ে হাজারো অভিযোগ থাকলেও তিনি নির্বাক। এসব তাঁকে স্পর্শ করে না। গত ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এই পদে আছেন। ২০০৯-এ তিনি ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। এই ১৩ বছরে ওয়াসার পানির মূল্য বেড়েছে ১৪ বার। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয়েছে তাকসিম এ খানের বেতনও। সর্বশেষ বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া রোগের মহামারির মধ্যে এক লাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয়েছে পৌনে ২ লাখ টাকা। এই বৃদ্ধির পর ওয়াসার এমডি হিসেবে তাঁর মাসিক বেতন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ হিসাবে নিয়োগের পর থেকে তাকসিম এ খানের মাসিক বেতন বেড়েছে ৪২১ শতাংশ। ২০০৯ সালের অক্টোবরে তাকসিম এ খান ওয়াসার এমডি হিসেবে ৩ বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ পান। এরপর বছরের পর বছর চুক্তির মেয়াদ রেড়েই চলেছে। সব দেখে শুনে ওই সিএনজি অটোরিকশাওয়ালার কথাই মনে পড়ল। এখন বলা যায়- ‘খামখা লিখে লাভ কী! লিখে তাকসিম এ খানকে নামানো যাবে না।’

গত ১৭ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার ও সার্ভিস (বেতন ও সুবিধাদি) অর্ডার লঙ্ঘন করে ওয়াসার এমডিকে অযৌক্তিক ও উচ্চ বেতন দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন একটি রিট করেন। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে তাকসিম এ খানকে গত ১৩ বছরে কী পরিমাণ বেতন-বোনাস ও টিএ/ডিএসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সে তথ্য জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদন আকারে ৬০ দিনের মধ্যে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওই সব তথ্য আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করি, আগামীতে এই রিপোর্ট আমরা পাব।

আবার সম্প্রতি তাকসিম এ খানের ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ)। এতে তাকসিম এ খানের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব জমা ও উত্তোলনের তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। ২৯ আগস্টের মধ্যে ব্যাংকের যাবতীয় হিসাব ও লেনদেনের তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে। এই তথ্য জমা দেওয়া হয়েছে কিনা তা এখনও জানা না গেলেও তাকসিমের আমেরিকা যেতে চাওয়ার ইচ্ছের কথা জানা গেল। তাকসিম এ খানের পরিবারের সদস্যরা থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তিনি প্রায় প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে যান।

এমন পরিস্থিতিতে এমন ভাবনা আসা নিশ্চয়ই অবান্তর হবে না- দেশে তাকসিম এ খান ব্যতিরেকে ওয়াসার এমডি পদের জন্য আর কোনো যোগ্য লোক নেই। নইলে এত অনিয়ম ও খামখেয়ালিপনার পরও তাকসিম এ খান সরকারি একটি সংস্থার প্রধান পদটি ধরে রাখেন কী করে? তাকসিম এ খানের ক্ষেত্রে কেন বারবার প্রচলিত বিধি লঙ্ঘন হওয়ার পরও সরকারের সংশ্নিষ্টরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। কেন তাকে ন্যূনতম জবাবদিহির আওতায় আনা যাচ্ছে না?

প্রসঙ্গত, এতো অভিযোগের পরও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন বিষয়টি অবাক হলেও সেটিই বাস্তবতা। কারন তাকে কোনো ভাবেই সরানো সম্বব নয় সেটি প্রমাণের অবকাশ নেই।

About Babu

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *