Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / খাবার নিয়ে অজুহাত দেখিয়ে প্রেমিক বর ত্যাগ করলেন বিয়ের মঞ্চ, অপ্রত্যাশিত কান্ড কনের

খাবার নিয়ে অজুহাত দেখিয়ে প্রেমিক বর ত্যাগ করলেন বিয়ের মঞ্চ, অপ্রত্যাশিত কান্ড কনের

গত ২৫ শে আগস্ট কক্সবাজারে অবস্থিত এক আত্মীয়র বাড়িতে প্রেমিক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন নামের ২৪ বছর বয়সী যুবকের সাথে বাগদান অনুষ্ঠানে কাছাকাছি বসেছিলেন মাহমুদা আনজুমান মিলি নামের ২২ বছরের তরুণী। হঠাৎ করে অনুষ্ঠান থেকে বর সেজে থাকা সাজ্জাদ চলে যাওয়া দেখার পর মিলি অনুষ্ঠানে মুষড়ে পড়েন। এতে করে আনন্দঘন পরিবেশ বিনষ্ট হয়। পরবর্তীতে জানতে পারেন সাজ্জাদের বাবা-মা খাবারের অজুহাত দেখিয়ে বর সাজ্জাদকে অনুষ্ঠানস্থল থেকে অনেকটা ধরাধরি করে নিয়ে যায়।

এরপর থেকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় মিলি তার প্রেমিক সাজ্জাদকে ফিরে পাওয়ার আশায় কাবিননামা ও সব কাগজপত্র নিয়ে উভয়পক্ষের স্বজনসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে যান। সেদিনের পর থেকে সে তার শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করেছে; যা তার কথায়- হাজার বার। কিন্তু সাজ্জাদ হোসেন তার প্রতি শুধু উদাসীনতা ও অবহেলা দেখিয়েছেন। উল্টো শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রতিনিয়ত তাকে অপমান ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাননাশের হুমকি দেয়।

সাজ্জাদ হোসেন কক্সবাজারের বৃহত্তর পাহাড়তলী সমিতির সভাপতি ও দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা মোঃ ইউসুফ সওদাগরের ছেলে।

মিলি দাবি করেছেন যে বাগদান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার জন্য তিনি সামাজিকভাবে কলঙ্কিত হয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের আগে সাজ্জাদ তাকে গোপনে ছেড়ে গেলেও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে তার তেমন একটা সমস্যায় পড়তে হতোনা। কিন্তু দুই পরিবারের মাধ্যমে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ায় তিনি এখন নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এলাকায় তার মর্যাদা ক্ষুন্ন করায় তার পরিবার তাকে বাড়িতে থাকতে দেয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। মিলি বলেন, আত্মহনন করা ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই।

এছাড়াও একটি অনুষ্ঠানে বরের পক্ষ তাদের লাঞ্ছিত করে চলে যাওয়ার কারণে তাদের পরিবারসহ সে সমাজে হেয় হওয়া ছাড়াও নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কোনো উপায় না পেয়ে মিলি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। যার নম্বর ৭৭৮/২২। এখন তাদের হু”মকির মুখে পড়েছেন তিনি।

মিলির পরিবার এবং মামলার নথি অনুসারে, দীর্ঘদিনের সম্পর্কের পর গোপনে ২০১৯ সালে সাজ্জাদ মিলিকে বিয়ে করে। বিষয়টি জানাজানি হলে সাজ্জাদের পরিবার প্রথমে মিলিকে পুত্রবধূ হিসেবে মানতে রাজি হয়নি। পরে নানা কারণে তারা রাজি হলেও সাজ্জাদের পরিবার বাগদান অনুষ্ঠানে বরের অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য ভরপুর খাবারসহ নানা দাবি জানায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কোনোভাবে মিলিকে এড়িয়ে যাওয়া। বাড়তি চাহিদা মেটাতে আর্থিকভাবে দরিদ্র হলেও গত ২৫ আগস্ট দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ের বাগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বর পক্ষ থেকে অতিথিদের অপ্রত্যাশিত আগমনের কারণে খাবার নিয়ে কিছুটা উত্তেজনা ছিল। অনুষ্ঠান শেষে হঠাৎ করেই সাজ্জাদের পক্ষের লোকজন ঠিকমতো আপ্যায়ন হয়নি দাবি করে একে একে চলে যেতে থাকে। একপর্যায়ে অনুষ্ঠানের মঞ্চে বসা বর সাজ্জাদকে তার মা টেনে নিয়ে যায়। এরপর থেকে সাজ্জাদ মিলির সব নম্বর ব্লক করে দেয় এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

প্রতিবেদকের প্রাপ্ত একটি অডিও রেকর্ডিংয়ে, সাজ্জাদের মাকেও তাকে অশ্লী”ল ভাষায় গা”লিগা/লাজ করতে শোনা যায়, তিনি দাবি করেন যে তিনি দোকানে যাওয়ার পরে তার ছেলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন।

মিলি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, অনুষ্ঠানের খাবার হিসেবে তারা আমাদের কাছে কবুতর, হাঁস, গরু, দেশি মুরগি, ইলিশ, গলদা চিংড়ি, খাসিসহ ১৪ ধরনের বাহারি খাবার চেয়েছে। আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা তেমন না থাকলেও তাদের চাহিদা অনুযায়ী তা যোগাড় করা হয়েছিল। কিন্তু তারা দারিদ্র্যের অজুহাত দেখিয়ে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে।

মিলি আরও জানান, সাজ্জাদের সাথে প্রেমের সর্ম্পের পর দুইজনই ১৯ সালে বিয়ে করে বৈধ সম্পর্কে জড়ায়। এত বছর আমি তাকে যতটা সম্ভব সাপোর্ট করেছি। তার জন্য জীবনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। তার কোনো সমস্যা হলে আমি ছাত্র হয়েও তার বাবার জমানো টাকা তুলে দিয়েছি। আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে সমস্যা হলে অনুষ্ঠানের আগে কেন তারা জানাননি। এখন কেন আমাদের সকল সম্মান নষ্ট করে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলছে; আমি এটা বুঝতে পারছি না। আমি এখন পরিবারের সদস্যদের কাছেও অবহেলিত।

মিলি ও তার পরিবারে যারা এ ধরনের অশান্তি সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে সাজ্জাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মিলি প্রথমে তার স্ত্রী বলে স্বীকার করেন। সাজ্জাদ আরও দাবি করেছেন যে মিলি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে করেছে। এদিকে মিলি সাজ্জাদের বাবা-মাকে যথাযথভাবে সম্মান না করায় সে সম্পর্ক শেষ করতে চায়।

এদিকে আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ যিনি কক্সবাজার পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে রয়েছেন তিনি ঘটনার বিষয়ে বলেন, অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে গিয়েছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে দেখতে পেলাম সাজ্জাদের বাবা অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যায়। তিনি যখন যাচ্ছিলেন তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন, তাকে যথাযথ সম্মান দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করলেও মামলা হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সেটা আর করা হয়নি।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *