বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) ডিসপ্যাচ অফিসার খলিলুর রহমান তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় ১০ জন পরীক্ষার্থীর কছে প্রশ্ন ফাঁস করেছেন। এদের মধ্যে তিনজন বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মরত আছেন। এছাড়া সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও রেলের বিভিন্ন নিয়োগে অন্তত কয়েকশ নিয়োগে তার হাত ছিল বলেও মঙ্গলবার (৯ জুলাই) আদালতে স্বীকার করেছেন খলিলুর।
জানা গেছে, খলিলুর অফিস সহায়ক হলেও তার সম্পর্ক থাকত পিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে সবুজ সিগন্যালের অপেক্ষা করতেন তিনি। সিগন্যাল পেলেই চূড়ান্ত লেনদেন করতেন। এর মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। তার চলাফেরা বা গ্রামের বাড়ি দেখে কারও বোঝার উপায় ছিল না তার রাজধানীর মিরপুরের ষাটফিট এলাকায় আলিশান বাড়ি, ব্যাংক হিসাবেও কয়েক কোটি টাকা রয়েছে।
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে অভিযুক্ত খলিলুর বলেন, প্রশ্ন পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ছয়জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। তবে তিনজন পরে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করেন। তিনজন বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মরত আছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন ক্যাডার কর্মকর্তার নামও আলোচনায় রয়েছে। এর আগে চ্যানেল ২৪-এর অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) প্রশ্নপত্র বেরিয়ে আসে। গত এক বছরে ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (বিপিএসসি) কর্মকর্তারা। আর এসব ফাঁস হওয়া প্রশ্নে অনেকেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এদিকে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসার পর তারাও আতঙ্কে রয়েছেন।
বিপিএসসির প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার (৯ জুলাই) পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ছয়জন জবানবন্দি দিয়েছেন। দোষ স্বীকার করা অন্য আসামিরা হলেন, পিএসসির অফিস সহকারী খলিলুর রহমান, অফিস সহকারী (প্রেরণ) সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী ভাই সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন এবং বেকার যুবক লিটন সরকার।
এদিকে আদালতে খলিলুর রহমানের দেওয়া তথ্য এখন তদন্ত করছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তে যদি তার ফাঁস করা প্রশ্নে সত্যিই ওই তিনজন কর্মকর্তার বিভিন্ন ক্যাডারে চাকরি করার সত্যতা মেলে তবে তাদের বিষয়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবে সিআইডি। এ ছাড়া তিনি আদালতে স্বীকার করেছেন, অন্তত শতাধিক সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও রেলওয়ের নিয়োগে খলিলুরের হাত রয়েছে। গ্রেফতারের পর রাজধানীর মিরপুরে খলিলের বাসায় গেলে খলিলের বিলাসবহুল জীবনযাপন দেখে বিস্মিত হন সিআইডি কর্মকর্তারাও। অর্থাৎ প্রশ্ন ফাঁস করে দ্রুত কোটিপতি হয়ে গেল খলিল। জবানবন্দিতে খলিলুর আরও বলেন, চাকরিপ্রার্থীদের তিনি পিএসসির সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। সেখান থেকে সবুজ সংকেত পেলেই নিয়োগ সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো।