সম্প্রতি বিরোধী দল বিএনপি বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছে। আন্দোলন সংগ্রাম করা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মৌলিক অধিকার। তবে আন্দোলনের কারনে জন দুর্ভোগ তৈরী হতে পারে যেটি অনাকাঙ্ক্ষিত। সরকার বিএনপির আন্দোলনে কোনো ধরনের বাধা দিবে না বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে জনগন ক্ষতির মধ্যে পড়বে। আন্দোলনের নামে বাড়াবাড়ি জনদুর্ভোগ বাড়াবে বলে এ প্রসঙ্গে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে আন্দোলনের নামে বাড়াবাড়ি করে মানুষের কষ্ট না বাড়াতে সরকার বিরোধীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশে বিরোধী আন্দোলন হতে পারে।
কিন্তু আন্দোলনের নামে বাড়াবাড়ি শুধু দেশের ক্ষতিই করবে না, মানুষের দুর্ভোগও বাড়াবে, সেটাও তাদের বোঝা উচিত।
রোববার (১৪ আগস্ট) গণভবনে আওয়ামী লীগের আট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধী দলসহ অনেকেই নানা কথা বলবে, সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে এসব কাজ বেশি করলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। তাদেরও এটা বোঝা উচিত। তবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের আছে।
তিনি বলেন, আন্দোলন (বিএনপি) নিয়ে তারা কতটা সফল হবেন জানি না। কিন্তু তারা যেভাবে এটা করতে চাইছে, তাতে দেশের আরও ক্ষতি হবে। কিন্তু সেটা আমরা সামাল দিতে পারবো, সেই বিশ্বাস আমার আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিরোধী দল সুযোগ পাচ্ছে, তারা আন্দোলন করুক। আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি যে খবরদার যারা আন্দোলন করছে, তাদের কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয় বা ডিস্টার্ব করা না হয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করবে, আমি বললাম, হ্যাঁ, আসতে দিন। কারণ দেশের মানুষ জানে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের কাজ করার চেষ্টা করছি।
মানুষের কষ্ট যে হচ্ছে, সেটা তাঁর সরকার উপলদ্ধি করতে পারছে বলেই প্রতিনিয়ত সেই কষ্ট লাঘবের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে এর দাম সমন্বয় করা হবে। একই সঙ্গে দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের এই সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে যখনই তেলের দাম কমবে তখনই আমরা সমন্বয় করব, এটাও আমার নির্দেশনা।
বর্তমান সংকট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন কমাতে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, হয়তো আরও কিছুদিন ভুগতে হবে। আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদন শুরু করলে এই বিদ্যুৎ সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে।
উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যু/দ্ধকে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা জনজীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, যার শিকার হচ্ছে বিশ্বের সাধারণ মানুষ।
তিনি বলেন, আমেরিকা রাশিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ শায়েস্তা হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশ নয়, ইউরোপের দেশগুলো এমনকি আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া- প্রতিটি মহাদেশের মানুষই ভুগছে। সব কিছুতেই এর প্রভাব পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লাভ কী? প্রকৃতপক্ষে কেউ যদি লাভবান হয়ে থাকে, তা হয়েছে আমেরিকা ও রাশিয়া। কারণ বিশ্ববাজারে ডলার ও রুবেলের মূল্য বেড়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ মা/রা যাচ্ছে।
অসাধু ব্যবসায়ীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর আমাদের কিছু লোক তো থাকেই অপ্রয়োজনেও জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়; ওই ছুতা ধরে—সেটাই হচ্ছে কিছু কিছু। না হলে এত দাম তো বাড়ার কথা নয় প্রত্যেকটা জিনিসের।
প্রসঙ্গত, আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য করা হলে দেশের মানুষ ব্যাপক সমস্যার পড়বে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উচিত জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করা।