শামীম ওসমান এবং আইভী রহমান নারায়ণগঞ্জের রাজনিতীর দুই দিগপাল তারা। দুজনেই আওয়ামীলীগের হলেও তাদের দুজনের মধ্যে নেই কোন মিল। সর্বদাই লেগে থাকে দ্বন্দ আর থাকে চাপা ক্ষোভ। এ দিকে সম্প্রতি প্রতিমন্ত্রীর পদমর্জাদা পেয়েছেন মেয়র আইভি রহমান।এতে শামীম ওসমানের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? তিনি কতটা খুশি ছিলেন? প্রথম খবর শোনার পর তার চেহারায় কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন কি? এমন হাজারো প্রশ্ন গত কয়েকদিন ধরে বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে।
শামীম ওসমান এমপি কি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে প্রতিমন্ত্রী করার পর তাকে উইশ করেছিলেন? ‘ভাই’ কি ‘বোনের’ মর্যাদা বৃদ্ধির খবরে ফুল-মিষ্টি পাঠিয়েছিলেন? তার কর্মী-সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের ‘দুর্ভোগ’ কি বেড়েছে? অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে সংবাদ মাধ্যম।
নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সরকার প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার পর শামীম ওসমান তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে মুখ খোলেননি। এমনকি কিছু লোক তার সামনে বিষয়টি অনুশীলন করার চেষ্টা করলে তিনি তাকে বাধা দেন।
কেন? শামীম ওসমান প্রসঙ্গ ভুলে যেতে চান? তার মনে কোনো ‘বেদনা চাপা’? জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রামে ওসমান পরিবারের দীর্ঘ আত্মত্যাগের কথা বিবেচনা করে শামীম ওসমানকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর অবশ্য বলেন, পদমর্যাদা সমান না বেশি, এটা কোনো বিষয় নয়, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আইভী-শামীম বৈরিতা তৃণমূল পর্যায়ে। এর আদৌ কোনো অবসান হবে কি-না বলা মুশকিল।
সম্প্রতি শামীম ওসমান-সেলিনা হায়াৎ আইভীর মধ্যে কথা, ফুল, মিষ্টি বিনিময় হয়নি বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এমনকি ঘনিষ্ঠ সাক্ষাৎও নয়। তবে উভয় নেতাই একে অপরের ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন। কেউ একে অপরের সম্পর্কে খোলাখুলি বা একান্তে কথা বলছেন না।
নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক, সামাজিক সূত্রগুলো বলছে, আগেরবার উপমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়া আইভী এবার পদোন্নতি পাওয়ায় তাঁর কর্মী, সমর্থক আর শুভাকাঙ্ক্ষীরা স্বভাবতই খুশি। তবে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে আইভী বিরোধী দলগুলো বিষয়টিকে কতটা আন্তরিকভাবে মেনে নিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শামীম ওসমানের অনুসারীরা মনে মনে ‘বেদনা চাপা’ রেখেছেন তা সহজেই অনুমেয়। আর তা বিস্ফোরিত হবে কি হবে না তা নির্ভর করবে আগামীতে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি কেমন হবে তার ওপর।
তিনবারের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে কি হুইপ করে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হবে? না-আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা কি অন্য পথ খুঁজবেন? নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ভারসাম্য রক্ষার প্রশ্নও রয়েছে।
প্রসঙ্গত, দলের যে কোন প্রয়োজনে বরাবরই শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ সবার থেকে বেশি ভুমিকা পালন করেছে। আর এই কারনেই তার সকল অনুসারীরা মনে করছেন তাকে অন্তত মন্ত্রী সভায় সংযুক্ত করা হোক।