Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ক্ষুদ্ধ হয়ে কূটনীতিক আনারকলিকে নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ক্ষুদ্ধ হয়ে কূটনীতিক আনারকলিকে নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সাম্প্রতিক সময়ে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় বাংলাদেশ দূতাবাসে নিযুক্ত ডেপুটি চিফ অব মিশন কাজী আনারকলির একটি ঘটনা মিডিয়াজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ওই নারীকে নিয়ে অভিযোগ উঠেছে তিনি নিষিদ্ধ দ্রব্য মা’/রিজু”য়ানা সংরক্ষণ করেছিলেন তার ঘরে। এই ঘটনার পর ইন্দোনেশিয়া থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ওই নারী কূটনীতিককে। এ ধরনের অপকর্মের জন্য ক্ষুদ্ধতা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করে মন্ত্রী জানিয়েছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিদেশে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বদনাম। আনারকলি যে কাজ করেছেন তাতে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আনারকলির এ ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ। মা/”রিজু”য়ানা বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ দ্রব্য। তিনি জাকার্তায় একজন নাইজেরিয়ান নাগরিকের সাথে থাকতেন বলে জানা গেছে। ইন্দোনেশিয়ার আইন প্রয়োগকারী বাহিনী নাইজেরিয়ান নাগরিকসহ আনারকলিকে গাঁজাসহ কয়েক ঘণ্টা ধরে আটক রাখে। এরপর বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আনারকলিকে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতকে ইন্দোনেশিয়ার অনুরোধের পর সরকারি মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

জানতে চাইলে নিউইয়র্ক সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন মঙ্গলবার ফোনে দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ইন্দোনেশিয়া গিয়েছিলাম। এ সময় আমাদের রাষ্ট্রদূত পুরো ঘটনা খুলে বলেন। তিনি (আনারকলি) একজন নিষিদ্ধ দ্রব্য গ্রহন করা নারী। আমি তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে বলেছি। রাষ্ট্রদূত তাকে ফেরত পাঠান। তার অপকর্মের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।’

একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি একজন নিষিদ্ধ দ্রব্য গ্রহন করা নারী। তাকে রিহ্যাবে পাঠানো দরকার। দেশের মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ানরা খুব ভদ্রলোক। বিপুল পরিমাণ গাঁ”/জাসহ হাতেনাতে ধরা পড়লেও তা প্রকাশ করা হয়নি। এখন রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষা। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকার সময়ও তিনি অপক’র্ম করেছিলেন। ওকে সেখান থেকে বের করে দাও। তিনি নিষিদ্ধ দ্রব্য গ্রহন করেছেন, তিনি অসুস্থ। তার চিকিৎসা দরকার। তার বিরুদ্ধে সরকারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে তার ঘরে নিষিদ্ধ দ্রব্য পাওয়ার ঘটনায় ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ মিশনের উপপ্রধান কাজী আনারকলিকে ঢাকায় ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

মঙ্গলবার তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। আমরা খবর দেখেছি, খবর শুধু দেখার বিষয় নয়, কয়েকদিন ধরে ওই কর্মকর্তার কথা জেনেছি। আমরা তদন্ত করছি। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর।’

আনারকলিকে ইন্দোনেশিয়ায় ‘প্রচুর পরিমাণ গাঁ/”জা রাখার’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করার পর, মঙ্গলবার জাকার্তা থেকে তার প্রত্যাবাসনের প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এতে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়া সরকারের নিষিদ্ধ দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ জাকার্তায় আনারকলির অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালায়। এরপর তাকে আ’টক করা হয় কিন্তু ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে কূটনৈতিক অনাক্র’ম্যতার ভিত্তিতে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পরে ইন্দোনেশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে এই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কখনোই পররাষ্ট্র ক্যাডারের উচ্চমানের সঙ্গে আপস করব না। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এতটুকুই বলতে পারি।’

কূটনৈতিক দায়মুক্তি থাকা সত্ত্বেও আনারকলির ঘরে অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হলো, এখানে কোনো ভুল নেই। এবং আমরা শুনেছি যে ওই বাড়িতে আরও একজন বিদেশী নাগরিক ছিল। সেক্ষেত্রে পুলিশ যেতে পারে।

তবে আমরা ইন্দোনেশিয়ার সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, তারা আমাদের সমর্থন করেছে। আর আমাদের কূটনীতিকরা আমাদের হেফাজতে, আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এটা আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে. তবে আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হবে। এবং এটি সঠিক পথে যাবে।

মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, গাঁ”জা উদ্ধারের অভিযোগে আনারকলির অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আরেক নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের একজন কর্মকর্তা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, এটাকে যাই বলুন না কেন, তিনি এর সঙ্গে জড়িত। এটা সে নিজে করেছে, নাকি তার বন্ধু করেছে- সেটা পরে তদন্তে উঠে আসবে। কিন্তু পুরো বিষয়টিই দুর্ভাগ্যজনক এবং বিব্রতকর।

তবে আনারকলির এ ধরনের কর্মকাণ্ড এটি প্রথমবারের মতো নয়। এর আগেও তিনি ভিন্ন ধরনের একটি ঘটনা ঘটিয়ে আলোচনায় আসেন। আরেকটি দেশ থেকেও তাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। তাকে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে দায়িত্ব দেয়ার পর সেখান থেকে তার গৃহকর্মী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। পারতপক্ষে তিনি বিভিন্ন স্থানে অপকান্ড ঘটিয়ে দেশের মান ক্ষুন্ন করেছে বলে জানা যায়।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *