একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়ে আসছিল। এর আগেও এই বিষয় নিয়ে এমপির সাথে বৈঠক করেন তারা। তবে সঠিক কোন সমাধানে পৈছাতে পারছিলনা তারা। সম্প্রতি এসকল বিষয় নিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় ।
এ সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বাকবিতণ্ডা হয়। তাছাড়া উপস্থিত নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের দিকে পানির বোতল ও খাবারের প্যাকেট ছুড়ে মারে।
পরে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর এলজিইডি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত বর্ধিত সভায় এ ঘটনা ঘটে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী উপজেলার নেতাদের কাছে সাংগঠনিক বিষয়ে জানতে চান। বাঁশখালীতে সম্মেলন থেকে ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন উপজেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুর। ওই বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক যাচ্ছেন না বলে বৈঠকে জানান তিনি।
আবদুল গফুরের বক্তব্যের একপর্যায়ে মোস্তাফিজুর রহমান ক্ষিপ্ত হয়ে পাল্টা বক্তব্য দিতে থাকেন। এ সময় তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন বাঁশখালীর সম্মেলনে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইদ্রিস। বাঁশখালীতে শৃঙ্খলা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার বক্তব্যের পর মুস্তাফিজুর রহমান উঠে দাঁড়িয়ে জেলা নেতাদের নামে বলতে থাকেন। এরপর জেলা ও উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতারা মঞ্চের কাছে উপস্থিত হয়ে এমপি মোস্তাফিজের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। একপর্যায়ে তিনি এমপির দিকে পানির বোতল ও খাবারের প্যাকেট ছুড়ে মারে।
পরে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকের বর্ধিত সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাঁশখালী উপজেলা কমিটি গঠন ও সম্মেলন নিয়ে বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মো. আর কিছু হয়নি। পরে আবার ঠিক করা হয়।
বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্ধিত সভায় সাংগঠনিক বিষয়ে কিছু তর্কাতর্কি হয়েছে। এটি বর্ধিত অধিবেশনে অনুষ্ঠিত হয়। বর্ধিত সভায় বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানকে বোতল দিয়ে আঘাত করার কথা শোনা যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বলতে পারব না।
এ বিষয়ে জানতে বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সভা শেষে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এটি খুবই ঘরোয়া বৈঠক। এ ধরনের বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা কখনো শান্তিপূর্ণ, কখনো উত্তপ্ত, কখনো উত্তপ্ত। আজকের (শনিবার) বৈঠকেও কিছু চাঞ্চল্যকর বক্তব্য পাওয়া গেছে। কিন্তু আমরা সেগুলিকে ম্যানেজ করে মিটিংটি হ্যাপি এন্ডিং করেছি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছালেম উদ্দিন আহমদ এমপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বর্ধিত সভায় সঞ্চালনা করেন। বর্ধিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, চন্দনাইশের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
এই ঘটনায় এখনো কোন হতাহতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে এই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান করার জন্য পরবর্তী আবার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কবে সে বিষয়ে কোন তথ্য পওয়া যায়নি।