বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে। এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দাবি, আ.লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জনগণের সংবিধানকে পরিবর্তন করেছে, যেটা নিজেদের সুবিধার জন্য করেছে। এটা কোন ভাবেই জনগণ মেনে নেবে না।
তিনি আরো বলেন, এখানে একজন সাবেক বিচারপতি বলেছেন, সংবিধান মেনে চলতে হবে। কিন্তু কোন সংবিধান? যে সংবিধানে আমার অধিকার কে”ড়ে নিয়েছে? যে সংবিধানে তিনটি অনুচ্ছেদে কাটা-ছেঁড়া করা হয়েছে, তা কখনো পরিবর্তন করা যাবে না। যে সংবিধানে আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছিলাম, আমরা স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব।’
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে একটি জাতীয় দৈনিকের কার্যালয়ে পত্রিকাটির ১৮ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ফখরুল।
ফখরুল বলেন, সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। সংবিধান মানুষের জন্য। এই সংবিধানে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সেজন্য বলেছি, সাংবিধানিক কমিশন তৈরি করব। সাংবিধানিক কমিশন গঠন করে জনগণের ম্যান্ডেট জিততে পারলে যে অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলো আমরা বাতিল করে দেব। আমরা জনগণের উপযোগী একটি সংবিধান নিয়ে আসার চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, অন্য কেউ কিছু বললে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যখন ব্যাখ্যা দেন, তখন তারা বলেন- এখন রাষ্ট্রবিরোধী মামলা হওয়া উচিত। সেটা হতে পারে না। ব্যাখ্যা খুবই স্পষ্ট, এ দেশের মানুষ যা চাইবে, সেটাই হচ্ছে সংবিধান। বর্তমান সংবিধান জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ যাতে সত্যিকার অর্থে সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধের কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত হয়, সেজন্য আপনারা অতীতে যে ভূমিকা রেখেছিলেন, তা অব্যাহত রাখবেন। আমার বিশ্বাস আপনারা জনগণের পাশে থাকবেন।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা একটা নষ্ট সময় পার করছি, একটা ভয়ানক সময় পার করছি। আমার কাছে আজ বিস্ময় মনে হয়। ১৯৭১ সালে আমরা সরাসরি স্বাধীনতা যু”দ্ধে জড়িত ছিলাম। আমি কি তখন জনগণের অধিকার, ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য যু”দ্ধ করেছিলাম?’
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের ১৯৭৫ সালের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ১৯৭০ সালের চেতনা বাস্তবায়ন করেছিল। তারা একদলীয় ব্যবস্থায় সংবাদপত্র বন্ধ করে স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়ন করেছিল। আজ আবারও একইভাবে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে জনগণের অধিকার সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নিচ্ছে।
ফখরুল আরও বলেন, ‘এ সময়টা আমাদের ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে কাটিয়ে উঠতে হবে। আমাদের জয়লাভ করতে হবে।’
এ সময় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ইকতেদার আহমেদ, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, নয়াদিগন্ত ব্যারিস্টার শিব্বির মাহমুদ, আলমগীর মহিউদ্দিন, সালাহউদ্দিন বাবর, মাসুম খলিলি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। . রহমান শিমুল বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিএফইউজে ইউনিটের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বর্তমান সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজে ইউনিটের সভাপতি কাদের হোসেন প্রমুখ। চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বিএনপি সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিএনপি দেশের তিনটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের আয়োজন করে। আগামীতে ঢাকায় একটি বিশাল গণসমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে বিএনপি যার ঘোষণাও ইতিমধ্যে দিয়েছে।