সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের জালিয়া”তির ঘটনা প্রায় পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনের মাধ্যমে উঠে আসে। কিছু কিছু নারী প্রতা’রণার ভ”য়ং’/কর জাল বিছিয়ে নারী সংশ্লিষ্ট আইনের মাধ্যমে এমনিভাবে হয়রানি করে বড় ধরনের প্রতারণা করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে তেমনি একটি প্রতা”রণার ঘটনা ঘটেছে একজন ধনাঢ্য প্রবাসীর সাথে।
জাল কাবিননামা বানানোর মাধ্যমে নিশাত আহমেদ খান নামের এক নারী ওই ব্যক্তিকে স্বামী দাবি করে। উক্ত ব্যক্তির নাম মিনহাজুর রহমান ( Minhazur Rahman ), যিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পাদের মালিক হয়েছেন। তিনি ইংল্যান্ডে ( England ) বসবাসকারী একজন বাংলাদেশি ( Bangladeshi ) এবং ইতালির ( Italian ) নাগরিক।
অভিযুক্ত নিশাত এক সময় কুমিল্লা দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের ( Comilla South Women’ Awami League ) সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ২০২১ সালে ( ) তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার ( Kasbar Brahmanbaria ) মরহুম খাজা আহমদ খানের ( Khwaja Ahmad Khan ) মেয়ে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৪ সালে। গ্রামের এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় শহীদুল হকের মাধ্যমে আইনজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পরিচয় দেওয়া নিশাতের সঙ্গে পরিচয় হয় মিনহাজের। সে সময় প্রবাসী মিনহাজের বাংলাদেশে জমি সংক্রান্ত মামলাসহ সম্পত্তি দেখাশোনা ও খাজনা আদায়ের জন্য একজন লোকের প্রয়োজন ছিল। এ ব্যাপারে নিশাত তাকে সাহায্য করার আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি সরল বিশ্বাসে তাকে দায়িত্ব দেন। এরপরও তিনি জানতেন না যে নিশাত আসলে তদারকির নামে মিনহাজের সব সম্পত্তি দখ”লের চক্রান্ত করছে। আর সেই কাজে তাকে সঙ্গ দেন শহীদুল হক।
মিনহাজ যখন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে ২০১৭ সালে দেশে এসেছিলেন সেই সময় নিজের লোক আছে দাবি করে সেই দায়িত্বও লুফে নেন নিশাত। এটাই ছিল নিশাতের প্রতারণার তুরুপের তাস। নিশাত তার পাসপোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল যে সে মিনহাজের স্ত্রী। এরই মধ্যে মিনহাজ ইংল্যান্ডে ফিরে যান। পরে নিশাত ঢাকায় ধানমন্ডির ৯নং রোডের ৪নং বাড়ির ফ্ল্যাটের ভাড়া প্রদানে গড়িমসি শুরু করলে নিশাতকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে বলেন মিনহাজ। এরপর সেই দায়িত্ব দেন ভাগ্নে বোরহান উদ্দিনকে।
২০২১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বন্ধু জাকির হোসেনের মাধ্যমে মিনহাজ জানতে পারেন, নিশাত মিনহাজকে অজ্ঞাত পরিচয় দিয়ে সাজিয়ে জা’ল বিয়ের সার্টিফিকেট তৈরি করেছেন। এদিকে ভাড়াটিয়াদের ভয় দেখিয়ে ধানমন্ডির ফ্ল্যাট দখল করে নেয় নিশাত। এরপর থেকে ফ্ল্যাটে নিশাতের লোকজনের হয়রানির শিকার হয়ে এলাকার মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে। ফ্ল্যাটে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আপত্তি জানালে ভবনের সভাপতি ও ব্যবস্থাপককে হুম”কিও দেন নিশাত।
এমন পরিস্থিতিতে এপ্রিলে দেশে আসেন মিনহাজ। এরপর নিশাত, তার মেয়ে ও মেয়ের জামাই তাকে তার ফ্ল্যাটে ঢুকতে বাধা দেয়। পরে ১০/১২ জন অ’/স্ত্র নিয়ে এসে তাকে মা”রধরের হুম”কি দেয়। ৬০ লাখ টাকা দিলে তারা ফ্ল্যাট ছেড়ে দেবে বলে জানায়। এরপর মিনহাজ ধানমন্ডি থানায় গিয়ে সাহায্য চান। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিশাত পুলিশকে ফেরাতে বাধ্য করেন। তিনি মামলা করতে চাইলেও পুলিশ অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর ২৬ এপ্রিল নিশাত তার দলবল নিয়ে কুমিল্লা হাউজিংয়ে মিনহাজের বাড়িতে হাম”লা চালায়। ঘরের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে জমির দলিল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যায়। এ সময় মিনহাজের তত্ত্বাবধায়ক গোলাম জিলানীকে মা”রধর করা হয়। পরে উলা জিলানীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন। মিনহাজকে নানাভাবে সহযোগিতা করায় নিশাত তার বন্ধু ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকিরের বিরুদ্ধে দুটি মিথ্যা মা”মলাও করেন।
শুধু তাই নয়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মিনহাজের ৩০ শতাংশ জমি নিজের নামে জালি”য়াতি করে অন্যত্র বিক্রির চেষ্টা করেন নিশাত। বর্তমানে সে মিনহাজের পরিবারের সদস্যদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়”রানি করছে। মিনহাজ ও তার ভাই নারী সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করেছেন। এই মিথ্যা মামলায় মিনহাজ ও তার ভাই জামিনে আছেন। নিশাত ও তার লোকজন মিনহাজকে ইংল্যান্ডে ফিরে যেতে বলছে, দেশে থাকলে মে/’রে ফেলার হুম”কি দিচ্ছে। চর’ম নিরাপত্তাহীনতায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মিনহাজ।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মিনহাজুর রহমান বলেন, এই নারী আমাকে তার স্বামী দাবি করছেন। কিন্তু বিয়ের তারিখের সময় আমি ইংল্যান্ডে ছিলাম। কাজীর সামনে অন্য একজনকে মিনহাজ হিসেবে হাজির করে জাল বিয়ের সনদ তৈরি করেছেন তিনি। সেখানে নিজেকে ডিভোর্সি বললেও তিনি তালাকপ্রাপ্ত নন। আবার সেই ম্যারেজ সার্টিফিকেটে নিশাত ও মিনহাজের জন্ম তারিখ একই দেখানো হয়েছে। এর মানে এটা জাল। “আমি একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা,” তিনি বলেন। আমি আমার কষ্টার্জিত সম্পত্তি ফিরে চাই এবং আমি সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ থেকে মুক্তি চাই।
মিনহাজ বলেন, দুর্নীতি ও অনৈতিকতার অভিযোগে বর্তমানে কারাগারে থাকা কাজী জায়েদুল হোসেন জাল বিয়ের সনদ স্বীকার করে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন।
ইব্রাহিম শাকিল ও ইউসুফ মিয়া নামে দুই যুবককে কানাডায় পাঠানোর নামে প্রতা”রক নিশাত লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা করলে নিশাতও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এছাড়া নিশাতের বিরুদ্ধে মহিলা লীগের নেত্রী হিসেবে চাঁদাবাজি, দখল ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, নিশাতের দখলে থাকা মিনহাজের সম্পত্তির পরিমাণ ১২ কোটি টাকার বেশি। মিনহাজ ১৯৮৯ সালে ইতালিতে তার নির্বাসন শুরু করেন। ২০০১ সালে ইতালীয় অভিবাসীদের মধ্যে সর্বোচ্চ কর প্রদানের জন্য তিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পুরস্কৃত হন। ২০০২ সালে, তিনি সেরা অভিবাসী ব্যক্তির জন্য বছরের সেরা ব্যক্তি নির্বাচিত হন। এরপর ইতালীয় পাসপোর্ট নিয়ে ইংল্যান্ডে নিজের ব্যবসা গড়ে তোলেন। তিনি ইংল্যান্ডের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। টনটনে ‘রয়্যাল কাস্ট’ নামে তার একটি বিখ্যাত ভারতীয় খাবারের রেস্তোরাঁ আছে। স্ত্রী-সন্তান ইংল্যান্ডে থাকলেও পরিবারের অন্য সদস্যরা দেশেই রয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে, নিশাত আহমেদ খান বিভিন্ন অজুহাত দেখান এবং বলেন, আমি এই মুহূর্তে হাসপাতালে আছি। এখন কথা বলতে পারব না। পরবর্তী সময়ে ফ্রি হলে কথা বলবো। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমাকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। আমি এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।