দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাধর তিন এমপির যুগের অবসান ঘটল। তাদের মধ্যে দুই সংসদ সদস্য ভূমিধস পরাজয় বরণ করেছেন। আরেকটি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতার অপব্যবহার, মামলা দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি, উন্নয়ন তহবিল আত্মসাৎসহ স্বর্গ থেকে নেমে আসা তিন শাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাস বলেন, “পটিয়ার সব অপরাধ সাংসদ সামশু, তার ছেলে ও স্বজনদের নেতৃত্বে। তার নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি দলীয় নেতাকর্মীরা। এবারের নির্বাচনে পটিয়ার জনগণ সকলের জবাব দিয়েছে। ব্যালটের মাধ্যমে অপকর্ম।লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর নেতৃত্বে গত ১০ বছর ধরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব চলছে। মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে যাবতীয় অপরাধের নেতৃত্বে ছিলেন নাদভি ও তার আত্মীয়রা। দুই উপজেলার মানুষ ভোটের মাধ্যমে তার বিদায় ঘণ্টা বাজিয়েছেন। চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসন থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পটিয়াকে অপরাধের স্বর্গে পরিণত করেছেন সামছুল হক চৌধুরী ওরফে ‘বিচ্চু সামশু’। পটিয়া প্রতিটি সেক্টর ভাগ করে তার ছেলে শারুন ও অন্যান্য আত্মীয়দের নিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নেয়। সামশু ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, সন্ত্রাসে পৃষ্ঠপোষকতা, বিএনপি-জামায়াতকে আশ্রয় দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়নের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন ভিচ্চু সামশু। এরপর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ৮৫ হাজার ৭৩ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। ফলে পটিয়ায় ভিচ্চু সামশু যুগের অবসান ঘটে।
চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থেকে পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েও বেপরোয়া হয়ে পড়েন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। নদভীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা, উন্নয়ন কাজের কমিশন নেওয়া, বালু মহল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। নদভী ছাড়াও তার স্ত্রী ও আত্মীয়দের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ফলে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া আওয়ামী লীগ তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তাই এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নদভীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন নেতাকর্মীরা। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেবের পক্ষে কাজ শুরু করেন। নির্বাচনে মোতালেবের কাছে ৪৫ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন নদভি। চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও একের পর এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছে। গত নির্বাচনের দিন তার অনুসারীদের ছেড়ে দিতে গিয়ে ওসিসহ পুলিশ সদস্যদের হুমকি দেন তিনি। এ ঘটনার জেরে তার প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এর আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এ ছাড়া তিনি অতীতে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের মারধর, অনুসারীদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে শিরোনাম হয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।