রমজান যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ভোজ্যতেলের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বেড়ে চলেছে। বাজারে সক্রিয় হয়েছে পুরনো সিন্ডিকেট, যা তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। রোজার চার মাস আগেই কোম্পানিগুলো মিল পর্যায় থেকে সরবরাহ কমিয়ে তেলের সংকট তৈরি করছে, ফলে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ছে। এমনকি খুচরা বিক্রেতারাও বেশি দাম দিয়েও চাহিদামতো তেল পাচ্ছেন না, ফলে বাজার থেকে সয়াবিন তেল প্রায় উধাও হয়ে গেছে। এতে সাধারণ ক্রেতারা খোলাবাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার পাম ও সয়াবিন তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে। যদিও মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা বেড়ে ১৮৫ টাকা হয়েছে, এবং বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬৭-১৭০ টাকায়। পাম তেল ও রাইসব্রান তেলের দামও বেড়েছে, যা আসন্ন রোজায় ভোজ্যতেলের বাজার আরও অস্থির করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা।
নয়াবাজারের মুদি বিক্রেতা মো. তুহিন জানান, ১৫ দিন আগেও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৭৯০-৮০০ টাকায় কিনে বিক্রি করতেন, এখন সেটি ডিলারদের কাছ থেকে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কোম্পানিগুলো সরবরাহ সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে মুনাফা লাভের সুযোগ নিচ্ছে।
জিনজিরা বাজারের আরেক মুদি বিক্রেতা সোহেল জানান, ১৫ দিন আগেও প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭-১৫৮ টাকায় কিনলেও এখন সেটি ১৮২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। উচ্চমূল্যের কারণে ক্রেতারা বোতলজাত তেল কেনার সামর্থ্য হারাচ্ছেন, ফলে খোলা তেলের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে।
তেল কোম্পানির ডিলাররা জানান, কোম্পানি থেকে প্রয়োজনের তুলনায় কম তেল সরবরাহ করছে, ফলে বাজারে সংকট বাড়ছে। খুচরা বাজারেও পাম তেল ও রাইসব্রান তেলের দাম বেড়ে গেছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, রমজানকে ঘিরে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে মুনাফা করার প্রবণতা দেখাচ্ছে। প্রতিবারের মতো এবারও রোজার আগে থেকেই পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ভোক্তাদের স্বার্থে এই অসাধু কার্যক্রমের ওপর এখনই নজরদারি প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম কিছুটা কমলেও দেশের বাজারে সেই প্রভাব পড়েনি। সরবরাহ কমানো এবং দাম বাড়ানোর এই কৌশলের কারণে সাধারণ ক্রেতারা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।