আগামী ৫ নভেম্বর শনিবার বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিএনপি। তবে বরিশালে বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকায় গণসমাবেশের সফলতা নিয়ে বড় ধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, বরিশালের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিএনপি নেতারা আশাবাদী জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে কোন্দল থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দ্বারাই সমাবেশ সফল হবে। এদিকে বিএনপির গণসমাবেশে কোন ধরনের বাধা দেবে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, এমনটাই দাবি করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর অশ্বিনী কুমার হল ও বিবি পুকুর বিএনপির মহাসমাবেশের ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। একই চিত্র বিএনপির সমাবেশস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যানের। এ ছাড়া বরিশালের প্রবেশদ্বার বরিশালের প্রবেশদ্বার নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাস টার্মিনালে বিএনপির ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার দেখা গেছে।
স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়ায় বিভাগীয় সাধারণ সভার প্রচারণা চালাতে পারছে বিএনপি। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে মহাসমাবেশের সফলতা নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি।
বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল
গতকাল কমিটির বৈঠকে বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল স্পষ্ট হয়েছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের সাম্প্রতিক সাবেক বিএনপি নেতাদের কেউই আমন্ত্রণ পাননি। তবে দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকলেও জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতাদের অনুসারীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ও মহানগর বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, বিভাগীয় নগরী বরিশালে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে মহানগর ও সদর উপজেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এমনকি নেতারা ও অন্য জেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে পারেননি, আশা করা হয়েছিল সদর উপজেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা সমবেত হবেন। তবে তাদের কর্মকাণ্ডে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মহাসমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও তাঁরা ইউনিয়ন কমিটি গঠন নিয়ে ব্যস্ত। ’
এদিকে বিভাগীয় সম্মেলন সফল করতে গত সোমবার সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নে আলোচনা সভার আয়োজন করেন উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম সেলিম মঞ্চে কমিটির ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। ওই ব্যানারে তাঁর নামের আগে উপজেলা শ্রমিক দল সভাপতি রফিকুল ইসলাম আকনের নাম থাকায় ক্ষিপ্ত হয়ে কর্মিসভা পণ্ড করে দেন সেলিম।
উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য ফজলুল হক সরদার বলেন, “এ বিরোধ অনেক আগের। বরিশাল জেলা বিএনপি সদর উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি তাদের নিজস্ব ঘোষণা করে। কমিটিতে জামায়াত থেকে নুরুল আমিনকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করা হয় যুবদল নেতা হত্যা মামলার আসামি রফিকুল ইসলাম সেলিমকে। এর পর সদর উপজেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।’
কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব
সম্প্রতি বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপি ১০টি ইউনিয়নে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আগের কমিটিও একই সময়ে ভেঙে দেওয়া হয়। এতে তিক্ততা আরো বাড়তে থাকে। জেলা ও সদর উপজেলার নেতারা ইউনিয়নগুলোতে কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিতাড়িতদের বাধার মুখে পড়েন। এরই ফলশ্রুতিতে সম্প্রতি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে কমিটি গঠন সংক্রান্ত বৈঠকে নিষেধাজ্ঞা দেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তবে কেন্দ্রের নির্দেশনা অমান্য করে পাঁচটি ইউনিয়নে কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন জেলা ও উপজেলা বিএনপি নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নে কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা চলাকালে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মজিবুর রহমান নান্টু ও সদস্য সচিব আকতার হোসেনকে শারীরিকভাবে লা”ঞ্ছিত করা হয়। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম সেলিমকে চরবাড়িয়া ইউনিয়নে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনের হাতে লা”ঞ্ছিত হয়েছে। এ ছাড়া চন্দ্রমোহন, শায়েস্তাবাদ ও রায়পাশা-কারাপুরের কর্মীসভায় জেলা ও উপজেলা বিএনপি নেতাদের লা’ঞ্ছিত করা হয়।
গতকাল বিকেলে বরিশাল নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে সদর উপজেলা বিএনপি তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিভাগীয় সাধারণ সভার প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির সহ-সভাপতি এ জেড এম জাহিদ হোসেন। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে দাওয়াতের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে তারা নির্দেশ অমান্য করে বিলুপ্ত কমিটির কাউকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে তাদের অনুসারীদের আমন্ত্রণ জানায়।
তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এনায়েত হোসেন। চরবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম সাবু বলেন, সাধারণ সভা নয়, ইউনিয়ন কমিটি নিয়েই ব্যস্ত জেলা ও উপজেলার নেতারা। ৬ নভেম্বর ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির ভাষ্য
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক বলেন, ‘উপজেলা বিএনপির সভায় কারা উপস্থিত থাকবেন তা উপজেলা বিএনপি সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে কোনো বিরোধ নেই। ‘
বরিশাল বিভাগীয় সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির সহ-সভাপতি এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, “কোনো অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। উপজেলা বিএনপির মতবিনিময় সভায় তৃণমূল নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর কথা বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে, এটাই হচ্ছে বড় বাধা। তবে যত বাধাই আসুক না কেন সম্মেলন সফল হবে।’
আওয়ামী লীগের ভাষ্য
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্যানেল মেয়র গাজী নাঈমুল হোসেন লিটু বলেন, আমরা কখনোই সমাবেশে বাধা দেওয়ার পক্ষে ছিলাম না এখনও নেই। শহরের চিত্র দেখলেই বুঝতে পারবেন। তবে সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা হলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হওয়ায় সমাবেশে নিজেদের মধ্যে সংঘ”র্ষ ঠেকাতে পারে বরিশাল বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ‘
তালুকদার মো. ইউনূস যিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন, তিনি বিএনপির গণসমাবেশ সম্পর্কে বলেন, ‘সমাবেশে তো কোনো রকম বাধা দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবে বিএনপির গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করবে, এমনটাই আশা করি। তবে গণসমাবেশের নামে যদি কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা বা বিশৃংখলা করা হয়, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বসে থাকবে না। তারা আইনগতভাবেই সকল ব্যবস্থা নেবে। তবে আমরা বিএনপি’র সমাবেশে সুষ্ঠুভাবে করলে খুশি হব।