বাংলাদেশে একটি বিষয় সবসময় পরিলক্ষিত হয়ে থাকে আর সেটা হলো, একজন সরকারী কর্মকর্তা নিজেকে জনগনের সেবক হিসেবে বিভিন্ন সভা সেমিনারে বক্তব্য দিলেও, তিনি টাকা নেওয়া ছাড়া কাজ করে না। বাংলাদেশের সরকারি কার্যালয়গুলোতে এটা একটা সাধারন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুরুত্বপূর্ন কাজ করিয়ে নিতে বা কোথায় কী পরিমান টাকা লাগে এমন তথ্য না জানার কারণে সেবাগ্রহীতা সাধারন মানুষেরা টাকা দিয়ে থাকে বা দিতে বাধ্য হয়। এবার এ বিষয় নিয়ে সরব হলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক মামুনুর রশীদ
তিনি বলেন, ‘কোনো দফতরেই টাকা ছাড়া কোনো ধরনের কাজ হয় না।’
শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ে সিটিজেন প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘জন শুনানি : জাতীয় উন্নয়ন ও স্থানীয় বাস্তবতা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
মামুনুর রশিদ বলেন, “সম্প্রতি একটি ছোট কাজের জন্য জেলা প্রশাসনের অফিসে ফোন করেছিলাম। তিনি সরাসরি বললেন দুই হাজার টাকা লাগবে। দুই হাজার টাকা কেন লাগবে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলল? দুই হাজার টাকা না দিলে আপনার কাজ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘টাকা ছাড়া কাজ হয় কোথাযও? আমিও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, এখানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আছেন। মেম্বার-চেয়ারম্যানের নমিনেশন নিতে কত টাকা লাগে? তিনি তো টাকা দিয়ে মনোনয়ন নেন, তারপর পাঁচ বছরে সেই টাকা তোলার চেষ্টা করেন। তাহলে ভাবেন জনগনের কি অবস্থা হয়! এই টাকা যাচ্ছে জনগণের পকেট থেকে।
জেলা প্রশাসকদের ক্ষমতার সমালোচনা করে মামুনুর রশীদ বলেন, জেলা প্রশাসকদের মনে হয় ব্রিটিশ আমলের রাজ প্রতিনিধি। তাদের এত ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন। অথচ এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেম্বার কারো কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা জেলা প্রশাসকদের হাতে।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের কোথাও আমাদের অংশগ্রহণ আছে? ঢাকা মেট্রোপলিটন গভর্মেন্ট হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। মেয়রের যে ক্ষমতা থাকার কথা, তাও নেই।
মামুনুর রশীদ বলেন, ‘রাষ্ট্রের সবাই উন্নয়ন কাজে অংশগ্রহণ করতে চায়। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমাদের কি সেই সুযোগ আছে? আমার মনে হয় না। থাকলে দেশ অনেক এগিয়ে যেত।
পরিবহন খাতের নৈরাজ্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবহন খাতে প্রতিদিনই ভাড়া বাড়ছে, এই টাকা কে দিচ্ছে? মানুষ দিচ্ছে। কিন্তু পরিবহন খাত সরকারের হাতে। সরকারের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা এখানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এখানে কথা হলো সরকারের সেবা পেতে কোথায় কোন কাজে কী পরিমান ব্যয় হয় সেটা কোনো কোনো অফিসে সামান্য বিষয়ে থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো তালিকা থাকে না। তবে এরপরে রয়েছে কারসাজি। প্রশ্ন করা হলে সেখানেও সাজানো চতুর উত্তর দিয়ে থাকেন কর্মকর্তারা।