বরখাস্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া তার পরিবারসহ আশ্রয় চেয়ে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে হাজির হন, পুলিশের নিরাপত্তায় রাজধানীর লালমাটিয়ার বাসায় ফিরেছেন তিনি তার পরিবার। দূতাবাসকে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, তার গ্রেফতারের ভয় নেই। দূতাবাসের কর্মকর্তারা এমরানকে এ তথ্য জানালে তিনি বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া সোমবার রাতে বলেন, শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দূতাবাসে অপেক্ষা করেছি।
সরকারের পক্ষ থেকে দূতাবাসকে জানানো হয়েছে, আমার গ্রেপ্তারের কোনো আশঙ্কা নেই। দূতাবাসের কর্মকর্তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। পরে পুলিশ এস্কট দিয়ে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, দুই ঘণ্টা আগে বরখাস্ত ডিএজি এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া সপরিবারে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে আসেন। তিনি কিছুক্ষণ আগে চলে গেছে।
বিকেলে এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া এক ক্ষুদে বার্তায় গণমাধ্যমকে বলেন, আশ্রয়ের জন্য পুরো পরিবার নিয়ে আজ মার্কিন দূতাবাসে বসে আছি। বাইরে পুলিশ। আজ আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ৪-৫ দিন ধরে আমার ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে হুমকি পাচ্ছি। এই সরকার ভালবাসার প্রতিদান দেয় জেল দিয়ে। আমার আমেরিকার কোনো ভিসা নেই। স্রেফ ৩টা ব্যাগে এক কাপড়ে আমার ৩ মেয়েসহ কোনোক্রমে বাসা থেকে বের হয়ে এখানে বসে আছি। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, এ মুহূর্তে এ বিষয়ে দেওয়ার মতো কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ডিএজি এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে সই করব না। পরদিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, চিঠিতে স্বাক্ষর না করার কথা বলে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন এমরান।
পরে, শুক্রবার, ডিএজি এমরানকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর (জিপি/পিপি শাখা) বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সলিসিটর রুনা নাহিদ আকতার সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘দ্য বাংলাদেশ ল অফিসারস অর্ডার, ১৯৭২’ এর ৪(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার নিয়োগাদেশ জনস্বার্থে বাতিলক্রমে তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। ’
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করার জন্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সহ ১৬০ জন বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া খোলা চিঠির পক্ষে অবস্থান নেন। এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে তিনি স্বাক্ষর করবেন না বলে জানান।
এমরান সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পক্ষে ড. হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে। যেখানে সোমবার বিকাল ৪টার মধ্যে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে। তবে, আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি সই করার সঙ্গে একমত নই। ইউনূসকে নিয়ে যেসব বক্তব্য ও পাল্টা বিবৃতি দেয়া হচ্ছে তার কোনো প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি। তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো অন্যভাবে মোকাবেলা করা যেত। তাকে চাপে রাখতেই এটা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি শুধু বাংলাদেশের জন্যই সম্মান বয়ে আনেননি, সারা বিশ্বের সম্পদ তিনি। ‘