Wednesday , November 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / কোটি টাকার সম্পদসহ স্ত্রীকে নিয়ে ফাঁসলেন কাস্টমস কর্মকর্তা

কোটি টাকার সম্পদসহ স্ত্রীকে নিয়ে ফাঁসলেন কাস্টমস কর্মকর্তা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর প্রায় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

যেখানে নজরুলের সম্পদের মধ্যে রয়েছে যশোরে নিজের নামে ১১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ জমি, স্ত্রী সানজিদা আকতারের নামে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট, যশোরে একটি একতলা বাড়ি, একটি দোকান ও ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ জমি। স্ত্রী গৃহিণী হলেও তার প্রচুর সম্পদ রয়েছে।

সংস্থাটির তদন্তে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় মামলাটি ইতোমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে। তবে সেসব অবৈধ সম্পদের প্রকৃত মূল্য অনেক বেশি হবে। দুদকের যশোর কার্যালয় থেকে যেকোনো সময় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানা গেছে।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহম্মদ আরিফ সাদেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর কমিশন একটি মামলার অনুমোদন দিয়েছে। দুদকের যশোর কার্যালয় থেকে মামলাটি দায়ের করা হবে।

দুদক সূত্র জানায়, রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট বিভাগ, কাপ্তাই সার্কেলে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৯৪ সালে যশোর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিসে অফিস সহকারী-কাম-নাগরিক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে পরিদর্শকের বর্তমান পদ পেয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউস, খুলনা মংলা কাস্টম হাউস ও ঢাকা অফিসে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১৭ সালের মার্চ মাসে রাজস্ব কর্মকর্তা পদে উন্নীত হন এবং রাজশাহী কাস্টমস, এক্সাইজ এবং ভ্যাট এবং সোনামসজিদ স্থলবন্দরে কর্মরত ছিলেন। নজরুল ইসলাম ১৯৯৮ সালে সানজিদা আক্তারকে বিয়ে করেন। তিনি একজন গৃহিণী।

অবৈধ সম্পদের বিষয়ে জানা গেছে, দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয় প্রাথমিক তদন্ত শেষে নজরুল ইসলাম ও সানজিদা আক্তারের বিরুদ্ধে সম্পদ ঘোষণার নোটিশ জারি করে। এরপর ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর তারা সম্পদের বিবরণী দাখিল করেন।

সম্পদের বিবরণী যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, নজরুল ইসলামের নামে যশোর সদর ও অভয়নগর এলাকায় ১০টি দলিলের মাধ্যমে ১১৭.২৫ শতাংশ বাগান/ধানী জমি। যার দালিলিক মূল্য ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৯৯২ টাকা। এছাড়া ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১৪ লাখ ১১ হাজার ৯৯২ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য দুদকের সম্পদ বিবরণ দাখিল করেন তিনি।

অন্যদিকে, তার স্ত্রী সানজিদা আকতারের ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট, যশোরে একটি একতলা বাড়ি, একটি দোকান এবং যশোরে ৪৭.৫শ’ টাকার ৩টি দলিল জমি রয়েছে, যার মধ্যে সর্বমোট ৫০ লাখ টাকা রয়েছে। সম্পদের বিবরণ দাখিল করেছেন ৪৬ লাখ ৭১ হাজার ১৭৩ টাকা।

অর্থাৎ দু’জনই দুদকের কাছে ঘোষণা করেছেন যে, তাদের ১ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার ৪৯২ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১৯ লাখ ২ হাজার ৬৭৩ টাকার অস্থাবর সম্পত্তিসহ মোট ১ কোটি ৬০ লাখ ৮৩ হাজার ১৬৫ টাকা রয়েছে।

কিন্তু দুদকের যাচাই-বাছাইয়ে তাদের নামে ১ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার ৪৯২ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৬১ লাখ ১৯ হাজার টাকার স্থাবর সম্পত্তিসহ ২ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৯৭ টাকার তথ্য পাওয়া গেছে। সে হিসেবে তিনি ৪২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নজরুলের স্ত্রী সানজিদা আক্তারের ঋণের তথ্য ৩৪ লাখ ৭১ হাজার ৩৯৮ টাকা।

নজরুল ইসলামের মোট আয় পাওয়া গেছে ৬১ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬ টাকা। আর পারিবারিক ব্যয় পাওয়া গেছে ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে তার স্ত্রী সানজিদা আক্তারের মোট আয় ৬৫ লাখ ৬ হাজার ৬৯৯ টাকা। একই সঙ্গে তার পারিবারিক খরচ পাওয়া গেছে ১৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ উভয়ের মোট বৈধ আয় ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬৫ টাকা এবং পারিবারিক ব্যয় ৫১ লাখ ১০ হাজার টাকা।

তাদের মোট সম্পদ রয়েছে ২ কোটি ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৩৩ টাকার। যার মধ্যে ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬৫ টাকা সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ৯২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬৮ টাকার সম্পদের বৈধ উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সে কারণে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় কমিশন রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সানজিদা আক্তারের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় পৃথক দুটি মামলার অনুমোদন দিয়েছে। দুদকের যশোর জেলা কার্যালয় থেকে শিগগিরই মামলাটি দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।

About Nasimul Islam

Check Also

ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে ‘আয়নাঘর’ নিয়ে মুখ খুললেন জিয়াউল আহসান

জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ আট কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *