সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি কমানোর জন্য বেতন বৃদ্ধি করা হয়, কিন্তু সেই পরিকল্পনা কোন কাজে আসেনি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে সরকারি কার্যালয়গুলোতে, যার বেশিরভাগই প্রকাশ পায় না। কারণ একজন সেবা গ্রহীতা অর্থের বিনিময়ে সেবা নিয়ে সেটা প্রকাশ্যে আনতে চায় না। যার কারণে সরকারি অফিসে ঘুষ দুর্নীতি কমছে না। এবার তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর কোটি কোটি টাকার সম্পদের খোজ পাওয়া গেল, যেটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে ওই এলাকায়।
মাদারীপুরে এলজিইডির তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী জাকির হোসেনের অফিস কক্ষে চলছে এসি। তিনি নগরীতে কোটি কোটি টাকার জমি কিনেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইফতেখার মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেন। জানা গেছে, একই কার্যালয়ের প্রকৌশলীর কক্ষে এসি নেই। এ নিয়ে অফিস কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষো’ভ বিরাজ করছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলা এলজিইডি কার্যালয়ের হিসাবরক্ষক মো. জাকির হোসেন এক সময় কালকিনি উপজেলা প্রকৌশলীর অফিসে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ সময় তার বিরুদ্ধে টেন্ডারের তফসিলে রেট কাটার অভিযোগে একটি বিভাগীয় মামলা করা হয়। মামলার পর তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরে একজন প্রভাবশালী নেতার সুপারিশে পুনর্বহাল করা হয়। প্রমোশন দেওয়া হয়। তাকে মাদারীপুর জেলা এলজিইডির হিসাবরক্ষকের পদ দেওয়া হয়।
এরপর থেকেই তিনি বেপরো’য়া দুর্নীতি শুরু করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই তার ছেলে মাদারীপুর এলজিইডি ভবনের দক্ষিণ পাশে মনিরুজ্জামানের নামে ১৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেন, যার বাজারমূল্য ১০ লাখ টাকা।
দুদকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে আরও জানা যায়, তিনি ঢাকায় ছেলে ও স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া এবং চুক্তি মূল্যের বেশি বিল করা। এ ছাড়া তিনি ভ্যাট, আয়কর, রোলার ভাড়া না কেটে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করেন। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব। ঠিকাদারদের বিল পরিশোধের সময় তারা দুই শতাংশ ঘুষ নেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জাকির হোসেন। তার দাবি, ষড়যন্ত্র করে তার নামে অভিযোগ করা হয়েছে। গরমের কারণে নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুমতি নিয়ে অফিসে এসি বসানো হয়েছে। তিনি প্রশ্নবিদ্ধ জমির মালিক নন।
মোঃ আশরাফ আলী খান যিনি মাদারীপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি এ বিষয়ে বলেন, তদন্ত কাজ শুরু করার সবকিছু শেষ হয়েছে। যদি প্রমাণিত হয় তাহলে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক-দু’দিনের ভিতরেই তার কক্ষে থাকা যে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সেটা খুলে ফেলা হবে। তবে ঠিক কিভাবে তিনি এত সম্পত্তির মালিক হলেন সে বিষয়টা খতিয়ে দেখতে তদন্ত টিম গঠন করা হবে।