‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজধানীবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ মহিদ উদ্দিন । তিনি বলেন, পুলিশ পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে আন্দোলনের সুযোগ দিয়েছে। তবে নতুন করে আন্দোলনের নামে সড়ক অবরোধ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সমসাময়িক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “গতকাল (বুধবার) হাইকোর্ট কোটা ইস্যুতে ৪ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। ফলে আমরা মনে করি, এখন কোটা আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
তুমুল আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ওই সময় জারি করা সার্কুলার সম্প্রতি হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ জুলাই থেকে আবারও মাঠে নামেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। একপর্যায়ে তারা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিও ঘোষণা করেন। আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) চতুর্থ দিনের মতো এ কর্মসূচি পালন করবেন তারা। এ কর্মসূচির ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীবাসী।
ড.বি.মাহিদ উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। হাইকোর্টের আদেশে চার সপ্তাহ স্থিতাবস্থার আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আজ থেকে শিক্ষার্থীদের আর জনদুর্ভোগ করার কোনও অবকাশ আছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) মনে করে না।
তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে তাদের প্রতি পুলিশের ভালোবাসা ও সহানুভূতি থাকতে হবে। তবে একই সঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা দেশের প্রচলিত আইন ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে সম্মান করতে বাধ্য। সেই জায়গা থেকে যেহেতু শিক্ষার্থীরা শিক্ষিত, সেহেতু ডিএমপির পক্ষ থেকে আমি বিনীত অনুরোধ করছি— তারা যেন মানুষের কোনও দুর্ভোগের কর্মসূচি না দেন।
গত ১০ দিন ধরে ঢাকা মহানগরীর শাহবাগ, সায়েন্সল্যাবসহ বিভিন্ন স্থানে জনসাধারণের যানবাহন ও চলাচল ব্যাহত হয়েছে উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মানুষ যাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারে সেজন্য ডিএমপি চেষ্টা করেছে। তবে আন্দোলনকারীদের সড়ক ব্লক করায় চরম ভোগান্তিতে হয়েছে। পুলিশ সবার অধিকারের বিষয়ে যেমন শ্রদ্ধাশীল, সেই সঙ্গে সম্মানিত মহানগরবাসীর নিরাপত্তায় ও গমনাগমনের জন্যও প্রাণান্ত চেষ্টা করে।’
মাহিদ উদ্দিন বলেন, “আশা করি আমাদের আবেদন এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের পক্ষে। তাই পরবর্তী কর্মসূচির কোনো যৌক্তিকতা নেই। শিক্ষার্থীদের প্রতি সহযোগিতা ও ভালোবাসা অব্যাহত থাকবে।
আজ ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। পুলিশ কী ব্যবস্থা নেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা শিক্ষার্থীদের পক্ষে রয়েছে। কাজেই আন্দোলনের যদি যৌক্তিকতা না থাকে, তবে তাদের আসা উচিত নয়। আন্দোলন না করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ রইলো। এরপরও নির্দেশনা না মানলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আইনের ৩৬ ধারা ও দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তা অপরাধ। গত ১০ দিনে পুলিশের কোনো সদস্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেননি যা পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। আমার বিশ্বাস শিক্ষার্থীরা সেই সম্মান বজায় রাখবে।