ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেছেন, ডিবি কাউকে ভয় পায় না। আমরা প্রকৃতপক্ষে অস্ত্রধারী ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছি। এটা চলতে থাকবে. অস্ত্রধারী ব্যক্তি কোনো দলের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ছাত্রদলের সাত কেন্দ্রীয় নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সম্প্রতি ছাত্রদলের সাত কেন্দ্রীয় নেতাকে চারটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বিষয়টিকে ‘দুর্বল চিত্রনাট্যের নাটক’ বলে অভিহিত করেছে ছাত্রদল।
গত ১৮ আগস্ট রাজধানীর আজিমপুর থেকে ছাত্রদলের ছয় নেতা নিখোঁজ হন। পরদিন তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসান, ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হাসানুর রহমান, আমর একুশে হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল রিয়াদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফ বিল্লাহ।
এর আগে গত ২৪ আগস্ট কালবাগান থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আবুল হাচান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে হারুন বলেন, অস্ত্র উদ্ধারে আমাদের ডিবি পুলিশের আটটি দল আলাদা আলাদা টিম রয়েছে। সম্প্রতি গুলশান গোয়েন্দা বিভাগ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও গুলিসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কলাবাগান থানা এলাকা থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আবুল হাচান চৌধুরীকে আটক করা হয়। চারটি অস্ত্র উদ্ধার ও ছাত্রদলের সাত কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হারুন বলেন, তারা ফেসবুকে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কথাবার্তা হয়েছে, তার ছবি আমাদের কাছে আছে। মাসুম নামে ঢাবি ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানকে বলেন, কথোপকথনে উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল দখল করা হবে।
হারুন বলেন, দলের কোনো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে যারা চোরাচালান, সন্ত্রাসী, অস্ত্র, মাদক ব্যবসা করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান। যদিও অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানি করার জন্য পরিকল্পিতভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক আলোচনা। আমরা আমাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেছি।
ছাত্রদলের গ্রেফতারকৃত নেতারা অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১১টি অস্ত্রের অর্ডার দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন ডিবি প্রধান। সম্প্রতি গ্রেফতারকৃতরা ছাত্রদলের নেতাকর্মী হতে পারে কিন্তু এর আগেও আমরা শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছি, বাড্ডা থানায় অস্ত্র মামলায় নাসির, কাউসার, জীবনকে গ্রেফতার করেছি, তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতা। .
কয়েকদিন আগে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার হারুন ও রশিদ হত্যা মামলার আসামি আসাদুজ্জামানকে দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছি। তখন কেউ প্রশ্ন করেনি? প্রশ্ন হল গ্রেফতারকৃতদের ছাত্রদল বলা হয় কেন? আমাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক নয়। কারা ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের সেটা আমাদের মূল বিষয় নয়। মূল কথা হলো সে একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি এবং মানুষের জীবন শেষ করার জন্য অস্ত্র ভাড়া করে।
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা যা করতে পারি তাই করব।
হারুন অর রশিদ বলেন, গ্রেফতারকৃত ছাত্রদলের সাত নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পারি তারা ১১টি অস্ত্রের অর্ডার দিয়েছে। এর মধ্যে আমরা মাত্র চারজনকে উদ্ধার করতে পেরেছি। আরও ৭টি অস্ত্র উদ্ধার করা বাকি। তাদের উদ্ধার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
জানতে চাইলে হারুন বলেন, এটা পরিষ্কার। নির্বাচনের ডামাডোল হতে আর এক মাস বাকি। জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। এ সময় ছাত্রদলের গ্রেফতারকৃত নেতাদের কাছ থেকে ১১টি অস্ত্র ও বোমা-গোলাবারুদ সংগ্রহ করা হলে তারা মোবাইল ফোনে আলাপচারিতায় হল দখলের কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, এটা কে ব্যবহার করবে, বিতরণ করবে? এটার মানে কি?
হারুন বলেন, প্রমাণ যাই হোক না কেন, আমরা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে, অবৈধ অস্ত্রধারীরা যে দলই হোক না কেন, আমাদের ডিবি পুলিশের প্রতিটি দল। আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রত্যেককে গ্রেফতার করা হবে।
তিনি বলেন, রিমান্ডে নিয়ে তাদের গডফাদারদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে চাই। একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী পুলিশকে দুর্বল ভেবে ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ালে, ডিবি দল বসে থাকলে তা হতে পারে না।
আইনি প্রক্রিয়ায় আমাদের যা করতে হবে আমরা তাই করব। আর অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের পর কেউ পুলিশকে হুমকি দিলে মনে রাখতে হবে, ডিবি পুলিশ হুমকিতে ভয় পায় না। বরং যাদের নাম আমরা পেয়েছি তাদের সবাইকে গ্রেফতার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অস্ত্রধারী কেউ দলভুক্ত নয়। আমরা ১১টি অস্ত্র উদ্ধার করব।