বিতর্কিত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে গভর্নরের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি মামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি) জানিয়েছে, এই চিঠিতে গভর্নরের বক্তব্যকে ভিত্তিহীন, মানহানিকর এবং ভীতি প্রদর্শনমূলক বলে অভিহিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি এফটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে এস আলম গ্রুপের ১০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা) পাচারের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা ব্যাংক খাতের দুর্বলতা ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় বিপুল অর্থ পাচার করেছেন। এস আলম গ্রুপ এই অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে চিঠির মাধ্যমে গভর্নরের মন্তব্যের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
চিঠির মূল বিষয়বস্তু:
১. গভর্নরের বক্তব্যকে “উসকানিমূলক এবং ভিত্তিহীন” বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২. এস আলম গ্রুপ দাবি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভুল এবং তা প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট করছে।
৩. বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মন্তব্যকে “বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অবস্থান” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
৪. এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে তাদের বিনিয়োগ ও অধিকার সুরক্ষিত। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে মামলা করা হবে।
বিতর্কের সূত্রপাত:
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে অনিয়মিত ঋণ নেওয়া এবং আমদানি কার্যক্রমে অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সাইফুল আলম বিদেশে বিনিয়োগের কোনো অনুমোদন নেননি।
সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব প্রশ্ন:
সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নেওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, এ বিষয়ে সিঙ্গাপুর সরকার বা এস আলম গ্রুপ কোনো মন্তব্য করেনি।
পরিপ্রেক্ষিত:
এই চিঠি এবং হুঁশিয়ারি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এস আলম গ্রুপের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের অর্থ পাচার এবং বিনিয়োগের বিষয়ে তারা কঠোর অবস্থানে থাকবে।