বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, কিন্তু বিএনপি নেত্রীর শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি কিংবা এখনো স্থিতিশীল অবস্থায় যায়নি এমনটি মনে করছেন তার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বেগম জিয়াকে সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা দেওয়ার পরেও তার শারীরিক অবস্থা কখনও ভালো হচ্ছে এবং কখনও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তার শারীরিক অসুস্থতা ভালোর দিকে যাচ্ছে না, সেই সাথে তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতি হওয়ার বিষয়টি নতুনভাবে উদ্বেগের একটি বড় ধরনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ এবং উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে তাকে সিসিইউ হতে কেবিনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন যিনি খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক হিসেবে রয়েছেন তিনি গত মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দেশের একটি গনমাধ্যমকে বলেন, ম্যাডাম এখনো অসুস্থ। যে কোন সময় ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা যে কোন কিছু হতে পারে। যে কোনো সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। তিনি সিসিইউতে আছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ম্যাডামের চিকিৎসায় বিদেশ থেকে কোনো ওষুধ বা যন্ত্র আনা হয়নি। কোনো হাসপাতালে রোগী চিকিৎসাধীন থাকলেও বিদেশ থেকে কিছু আনা কি সম্ভব নাকি। আপনি চাইলে বিদেশ থেকে কিছু এনে হাসপাতালের একটা ডিপার্টমেন্টে স্থাপন করতে পারবেন? এখন কেউ যদি কিছু লিখে দেন তখন আমাদের আসলে কিছুই করার নেই।
খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার গনমাধ্যমকে বলেন, ম্যাডামের কোনো উন্নতি নেই, আগের মতোই আছেন। চরম ঝুঁকির মধ্যে আছেন তিনি। যার কারণে সিসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া যাচ্ছে না। তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল বলেই তাকে নানা রকম সাপোর্টে দিয়ে সিসিইউতে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ম্যাডাম কিছুই খেতে পারছেন না। খেলেই বমি করে দিচ্ছেন। শুধু স্যুপ খাচ্ছেন ও স্যালাইন চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ম্যাডাম অবস্থা কখনও ভালো, আবার কখনও খারাপ। চিকিৎসকরা বলছেন এ অবস্থা তার জন্য বিপদজনক। কারণ যেকোনো সময় তার অবস্থা খারাপ হতে পারে। তখন এখনকার এ চিকিৎসা কোনো কাজে আসবে না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ম্যাডাম যে অবস্থায় আছেন এ অবস্থায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়া হলে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু কোনো কারণে তার অবস্থা যদি আরও খারাপ হয়ে যায়, তাহলে তখন তাকে বিদেশে নিয়ে গেলেও লাভ হবে না। তখন বিদেশে চিকিৎসাও তার কোনো কাজে আসবে না এটাই চিকিৎসকদের আশঙ্কা। কিন্তু সরকার তো সেদিকে কোনো কর্ণপাত করছে না।
বিএনপির একটি সূত্রের ভাষ্য, খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে সরকারের ওপর বিভিন্ন মহল থেকে চাপ অব্যাহত আছে। সরকার বিষয়টি নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। কিন্তু তারপরও কেন তারা অনুমতি দিচ্ছে না এটা রহস্যজনক। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ইস্যুতে সরকারের অবস্থান দেখে অনেকটা এমন মনে হয় যে তারা স্বাধীনভাবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অন্য কোনো পক্ষ বা গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ আসছে বারবার সরকারের ওপর। তবে ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতিকে একটা সুস্থ জায়গায় নিয়ে আসতে হলে বাইরের যতই চাপ থাকুক, সরকারের উচিত খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। না হলে হাসপাতালে খালেদা জিয়ার যদি কিছু হয়ে যায়, এর জন্য সরকার যেমন দায়ী থাকবে, তেমনি চলমান দেশের হিংসা-বিদ্বেষের রাজনীতি স্থায়ী রূপ নেবে।
গত মাসের (নভেম্বর) ১৩ তারিখ ঢাকার নামকরা ঐ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বেগম জিয়াকে করোনারী কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে। বিএনপির নেতারা তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন খুব খারাপের দিকে, তিনি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন। তাকে নিয়ে ক্ষমতাসীন দল রাজনীতিতে মত্ত হয়েছে। বেগম জিয়া লিভার সিরোসিসসহ আরো বেশ কিছু জটিল অসুখে ভুগছেন। দেশের চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করা সম্ভব নয়। খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে অবিলম্বে চিকিৎসার দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি তীব্র আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির তরফ থেকে।